বৃহস্পতিবার ২০শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

শান্তিগঞ্জে কিস্তির টাকা নিয়ে উধাও গ্রহীতা, বিপাকে জামানতকারী

কাজী জমিরুল ইসলাম মমতাজ, শান্তিগঞ্জ   |   মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   332 বার পঠিত

শান্তিগঞ্জে কিস্তির টাকা নিয়ে উধাও গ্রহীতা, বিপাকে জামানতকারী

◼️৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে ৮ লাখ সহ প্রায় ১১ লাখ টাকা নিয়েছেন, আকলিমা বেগম ও মঈন উদ্দিন দম্পতি

সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের আস্তমা গ্রামের মৃত আরিফ উল্লাহর মেয়ে আকলিমা বেগমের বিয়ে হয়েছিল জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের শ্রীমতপুর গ্রামের সুন্দর আলীর ছেলে মঈন উদ্দিনের কাছে। বিয়ের পর থেকেই আকলিমা বেগমের স্বামীর বাড়ির লোকদের বনিবনা না হওয়ায় স্বামীকে নিয়ে চলে আসেন বাবার বাড়িতে। নিজে ও নিজের স্বামীকে প্রতিষ্ঠিত করতে নিজ বাড়ির আশেপাশের লোকদের হাতে পায়ে ধরে আকলিমা বেগম তাঁর অসহায়ত্বের কথা বলে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের জামানতকারী ও স্বাক্ষী হিসাবে ৩-৪ জনকে রাজি করান। তারা স্বাক্ষী ও জামানতকারী হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আকলিমা বেগমকে ঋণ দিতে থাকে। কিছুদিন যেতে না যেতেই আকলিমা বেগম বিভিন্ন ক্ষুদ্র ঋণ দাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ তুলে স্বামীকে বিদেশে পাঠান। এরইমধ্যে অনেকটা সময় পার হয়ে যায়। কিন্তু বিদেশে মঈন উদ্দিন ভালো কিছু করতে না পেরে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে দেশে চলে আসেন। তবে তারিখ মতো কিস্তির টাকা পরিশোধ করেতে করতে আকলিমা বেগম উপজেলার বেসরকারী ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক, টিএমএসএস, উদ্দীপন সহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের একজন বিশ্বস্ত গ্রাহক হিসাবে পরিচিত লাভ করেন। আর এভাবেই গত ২০২৪ সালে ৫ই আগস্টের আগে বেসরকারী এনজিও ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক, টিএমএসএস, উদ্দীপন থেকে ৮ লাখ টাকা সহ প্রায় ১১ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। ৫ আগস্টের পরেই স্বামীকে নিয়ে উধাও হয়েছেন আকলিমা বেগম-মঈন উদ্দিন দম্পতি। ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান গুলো গ্রহীতা আকলিমা বেগম ও তার স্বামীকে না পেয়ে এবার জামানতকারী ও স্বাক্ষীদের বাড়িতে গিয়ে চাপ প্রয়োগ করছেন। প্রতিষ্ঠান গুলো বলছে যেহেতু আকলিমা বেগমকে পাওয়া যাচ্ছে না এবার আপনারাই বাকি কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হবে। এখন চরম বিপাকে পরেছেন গ্রামের সহজসরল জামানতকারী সিএনজি চালক শাহ আলম, কৃষক নাইম উদ্দিন, আব্দুল ওয়াকিব ও গৃহীনী রত্না বেগম।

এনজিও ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ‘উদ্দীপন’ শান্তিগঞ্জ শাখা থেকে গত ২১শে আগস্ট ২০২৪ তারিখে আকলিমা বেগম ৪ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছেন, একই সাথে ব্র্যাক পাগলা বাজার শাখা থেকে ৩ লক্ষ টাকা ও টিএমএসএস থেকে ১ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠান গুলোতে জামানতকারী ও স্বাক্ষী হিসেবে আস্তমা গ্রামের সিএনজি চালক শাহ আলম, কৃষক নাইম উদ্দিন, আব্দুল ওয়াকিব ও গৃহীনী রত্না বেগম স্বাক্ষর ও তাদের চেকের পাতা জমা দিয়েছেন।

আস্তমা গ্রামের মৃত আব্দুল খালিকের ছেলে সিএনজি চালক শাহ আলম বলেন, আমি একজন খেটে খাওয়া মানুষ, আকলিমা আমার সম্পর্কে ভাগনী হয়। সে আমাকে হাতে পায়ে ধরে অসহায়ত্বের কথা বলে আমাকে জামানতকারী হিসেবে রেখে এনজিও প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ও উদ্দীপন থেকে টাকা নিয়েছিল। প্রথম থেকে তারা ভালো ভাবে ঋণ পরিশোধ করেছে, আমিও সরল বিশ্বাসে বার বার আকলিমাকে সহযোগিতা করেছি। প্রতিবারই আমি সহ আমাদের গ্রামের আরো অন্যান্যরাও স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন এনজিও গুলোতে। গত বছর উদ্দীপন থেকে ৪ লাখ টাকা, ব্র্যাক থেকে ৩ লাখ টাকা ও টিএমএসএস থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন আকলিমা ও তার স্বামী মঈন উদ্দিন। এ সময় ব্র্যাক ও উদ্দীপন আমার ব্যাংক হিসাবের চেকের পাতা জমা দিতে বলেন। আমি চেকের পাতা জমা দিতে রাজি না হলে এনজিও গুলো ঋণ দেবে না বলে জানায়। পরে আকলিমা আমার কাছে অনেক কান্নাকাটি করে বলে মামা তোমার চেক না দিলে আমাকে ঋণ দেবে না তারা। তার কান্নায় এবার আমি চেকের পাতা দেই। পরে এনজিও গুলো তাকে ঋণ প্রদান করেন। এতোমধ্যে এনজিওতে কয়েকটি কিস্তিও পরিশোধ করেছে আকলিমা। চলতি বছরের জানুয়ারী মাস থেকে হঠাৎ করেই স্বামী সন্তান নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। কোথাও খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাদেরকে। এবার এনজিও গুলো আমি সহ বাকি সবাইকে কিস্তির টাকা পরিশোধ করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তারা বারে বারে আমাদের বাড়িতে এসে যা-তা অবস্থায় কথা বলছেন। আমি সহ আমরা এখন চরম ভাবে ভোগান্তিতে পড়েছি।

আস্তমা গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে আব্দুল ওয়াকিব জানান, এনজিও গুলোর চাপের কারণে আমরা এখন দিশে হারা। প্রতিবেশি হিসেবে আমি টিএমএসএস এনজিওতে ১ লাখ টাকার জামানতকারী হিসেবে স্বাক্ষর দিয়েছি, সেই সাথে ব্র্যাক ও উদ্দীপনের স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর দিয়েছি। এখন আমাদের রাতের ঘুম হারাম করছে এনজিও গুলো। তারা এখন আমাদের হুমকিও দিচ্ছেন, যে আমার টাকা পরিশোধ না করলে তারা আমাদের বিরোদ্ধে মামলা করবেন। এর পরেও আমরা আকলিমা ও তাঁর স্বামীকে খোজে বের করার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। কিন্তু কোথাও খোজে পাচ্ছি না।

আস্তমা গ্রামের রইছ মিয়া নাঈম উদ্দিন জানান, আমরা এখন খুবই অসহায়ত্বে দিন কাটাচ্ছি। এনজিও গুলো প্রতিদিন বিভিন্ন ভাবে চাপ দিচ্ছেন টাকা দেওয়ার জন্য। আমাদের সরলতার সুযোগটি নিয়েছেন আকলিমা বেগম ও তাঁর স্বামী মঈন উদ্দিন। দিন আনি দিন খাই, এই অবস্থায় আমরা কি ভাবেই তাঁর ঋণের এতো টাকা আমরা পরিশোধ করবো? আমরাতো সেই টাকা খাইনি বা ব্যবহার করিনি? আমাদের কেনো গ্রহীতার টাকা পরিশোধ করতে হবে। এনজিও গুলো আমাদের কথার কোন মূল্যায়নই করছে না। তারা চাপ দিচ্ছেন বার বার। আকলিমা বেগম এনজিও ছাড়াও এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে আরো প্রায় ৩-৪ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে আকলিমা বেগম ও তার স্বামী মইন উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ না করতে পাড়ায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এনজিও সংস্থা ব্র্যাক পাগলা বাজার শাখার ম্যানেজার মোবারক হোসেন জানান, আকলিমা বেগম আমাদের কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। টাকা আদায়ের ব্যাপারে জামানতকারী ও স্বাক্ষীদের চাপের ব্যাপারে কিছু বলতে চান না বলে জানান। আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আছেন তারা বিষয়টি দেখবেন।

বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা উদ্দীপনের শান্তিগঞ্জ শাখার ম্যানেজার মিজানুর রহমান জানান, আকলিমা বেগম আমাদের কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন, ইতিমধ্যে ৪টি কিস্তিতে মোট ১ লক্ষ ৭ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। জানুয়ারী মাস থেকে কিস্তি বন্ধ রাখায় আমরা তাঁর দেওয়া ঠিকানায় খোজ খবর নিয়ে জানতে পানি তিনি আর এলাকায় থাকেন না। পরে জামানতকারী ও স্বাক্ষীদের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি তাদেরকে বলি। তারাও খোজা-খোজি অব্যাহত রেখেছেন। তবে টাকা অবশ্যই গ্রহীতাকে পরিশোধ করতে হবে। না হলে আমরা আইনি ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Facebook Comments Box

Posted ১০:৫৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

ajkersangbad24.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক
ফয়জুল আহমদ
যোগাযোগ

01712000420

fayzul.ahmed@gmail.com