মঙ্গলবার ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

হাওরাঞ্চলে জলবায়ূ পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় আরো বেশি করে প্রকল্প নেওয়া প্রয়োজন : জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া

শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি   |   বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   68 বার পঠিত

হাওরাঞ্চলে জলবায়ূ পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় আরো বেশি করে প্রকল্প নেওয়া প্রয়োজন : জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া

সুনামগঞ্জে জলবায়ু সহনশীলতা এবং টেকসই কমিউনিটি উন্নয়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে “ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফর সাসটেইনেবল কমিউনিটি লাইফ ইন দি হাওর রিজিয়ন অফ বাংলাদেশ” প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটি ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট ইনিশিয়েটিভ (ইকি) স্মল গ্রান্টস প্রোগ্রামের অর্থায়নে সুনামগঞ্জের জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ হাওর অঞ্চলে বাস্তবায়িত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালে সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার এফআইভিডিবি’র প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সমাপ্ত হওয়া প্রকল্পটি কমিউনিটির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।

অনুষ্ঠানে জি আই জেড এর প্রতিনিধি ফাইজা বুশরার সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক, ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন সহ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা।

জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশের জলবায়ু হটস্পটের একটি হাওর অঞ্চল, যেখানে আকস্মিক বন্যা বা আফালের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, “এই প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো হাওর অঞ্চলের গ্রামীণ বসতি ও কৃষিকাজের ওপর দিন দিন ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। তিনি এ ধরনের জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনমূলক উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য অর্থায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়াও তিনি এ ধরনের উদ্যোগের সম্প্রসারণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অবদান রাখার আহ্বান জানান।”
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) হাওর অঞ্চলের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ তিনটি এলাকাকে চিহ্নিত করে জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। টিএমএসএস, এফআইভিডিবি এবং পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রকল্পের আওতায় তিনটি ইউনিয়নে জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ, টেকসই জীবিকা নির্বাহে সহায়তা, এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে।

জেলার দিরাই এবং জামালগঞ্জ উপজেলার জারুলিয়া, রাধানগর এবং লম্বাবাক হাটিতে প্রকল্পটির কার্যক্রমের সফল সমাপ্তির পর এই হস্তান্তর অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। দুই বছর ব্যাপী প্রকল্পটির মূল কার্যক্রমের মধ্যে ছিল প্রায় ১.৬ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল ও প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ, প্রায় ৫,০০০ স্থানীয় প্রজাতির গাছ রোপণের মাধ্যমে বাফার জোন তৈরি, এবং কমিউনিটির উন্মুক্ত জায়গাসমূহ উঁচু করা।
এই প্রকল্প থেকে প্রায় ৪,৬০০ জন উপকারভোগী সুবিধা পেয়েছে, যা আকস্মিক বন্যা ও ক্ষয়প্রবণতা থেকে তাদেরকে রক্ষা করার পাশাপাশি টেকসই জীবিকা ও পরিবেশ পুনরুদ্ধারের ভিত্তি স্থাপন করেছে।

জারুলিয়া হাটির পক্ষ থেকে জনাব মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “হাওর অঞ্চল একদিকে যেমন সুন্দর, তেমনি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। নতুন সুরক্ষা দেয়াল এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির সহায়তা পাওয়ার ফলে প্রতিবছর আফালের প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্থ ঘরবাড়ি মেরামত করতে যে ১০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার প্রয়োজন হত তা থেকে আমরা বেঁচে গিয়েছি।“

এই পাইলট প্রকল্পটি শুধু বাংলাদেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কার্যকর কমিউনিটি ভিত্তিক জলবায়ু অভিযোজনের উদাহরণ নয়, বরং এটি বিশ্বের অন্যান্য জলবায়ু সংবেদনশীল অঞ্চলের জন্যও একটি অনুসরণযোগ্য মডেল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

উল্লেখ্য, প্রকল্পটি জার্মান সরকারের ইকি স্মল গ্রান্টস প্রোগ্রামের অধীনে বাস্তবায়িত, যা স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু ও জীববৈচিত্র্য সমন্বিত সমাধানকে শক্তিশালী করার উদ্দ্যেশে কাজ করছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নে সহায়তা করছে জিআইজেড বাংলাদেশ।

Facebook Comments Box

Posted ১০:৫৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫

ajkersangbad24.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক
ফয়জুল আহমদ
যোগাযোগ

01712000420

fayzul.ahmed@gmail.com