অনলাইন ডেস্ক | সোমবার, ১৩ মে ২০২৪ | প্রিন্ট | 48 বার পঠিত
ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত সোমবার (১৩ মে) এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
শিশু জায়েদকে মামার জিম্মায় দিতে নির্দেশ হাইকোর্টের
এদিন, ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় তিথিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষের দেয়া সাক্ষ্যে কী কী বলা হয়েছে, তা তিথিকে পড়ে শুনিয়ে জানতে চাওয়া হয় তিনি দোষী না নির্দোষ। তিনি দোষ স্বীকার করলে বিচারক রায় ঘোষণা করেন।
বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন, তিথি সরকারের আগের ২১ মাসের কারাভোগ বর্তমান সাজা থেকে বাদ যাবে। এ ছাড়া তাকে এক বছরের জন্য প্রবেশনে রাখার আদেশ দেয়া হয়। এই সময়ে নিয়মিত প্রবেশন কর্মকর্তার কাছে হাজিরা দিতে হবে তাকে।
সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী জুয়েল মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বিস্তারিত জানিয়ে বলেন, তিথিকে এক বছরের জন্য সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানো হবে। যদি প্রবেশনে তিথি নিজেকে ‘সংশোধন’ করে নেন, তাহলে তাকে পাঁচ বছরের সাজা ভোগ করতে হবে না।
প্রবেশনে একজন দণ্ডিতের শাস্তি স্থগিত রেখে কারাগারের বদলে তাকে মুক্ত থাকার সুযোগ দেয়া হয়। তবে এ সময় তাকে বেশ কিছু শর্ত মেনে নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপন করতে হয়।
এ ট্রাইবুনালে তিথির বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের আরও একটি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত বেঞ্চ সহকারী জুয়েল।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী তিথির বিরুদ্ধে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার পোস্ট দেয়ার অভিযোগ তুলে ২০২০ সালে মামলা করেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা আবু মুসা রিফাত। এরমধ্যে তিথিকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তিথি তখন বলেছিলেন, তার ফেসবুক পাতা হ্যাকারের কবলে পড়েছে। অভিযোগ জানিয়ে থানায় জিডিও করেছিলেন তিনি।
এরপর ওই বছর ২৪ অক্টোবর ঢাকার পল্লবীর বাসা থেকে থানার পথে বেরিয়ে নিখোঁজ হন এই তরুণী। তার পরিবার থানায় জিডিও করে।
এর মধ্যে ওই বছরের ৩১ অক্টোবর সিআইডির সাইবার মনিটরিং টিম দেখতে পায়, সিআইডির মালিবাগ কার্যালয়ের চারতলা থেকে তিথি সরকারকে ‘হাত পা-বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে’ বলে একটি পোস্ট সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে।
তখন সিআইডি তদন্তে নেমে ‘গুজব রটনার’ অভিযোগে নিরঞ্জন বড়াল নামের একজনকে রামপুরার বনশ্রী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
১৮ দিন পর, ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর তিথি সরকারকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি জানায়, নরসিংদীর মাধবদীর পাঁচদোনায় স্বামীর এক দূরসম্পর্কীয় আত্মীয়ের বাড়িতে তাকে পাওয়া গেছে।
সিআইডি তখন বলেছিল, তিথি তার ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় ধর্মীয় উসকানিমূলক পোস্ট, কমেন্ট ও তথ্য শেয়ার করেন। যার ফলে বিশ্বদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সমাবেশ করে। ভবিষ্যৎ বিপদ এড়াতে এবং নিজেকে নিরাপদ রাখতে ফেসবুক আইডি হ্যাকড হয়েছে মর্মে গত ২৩ অক্টোবর পল্লবী থানায় একটি জিডি করেন তিথি।
‘তারপর আত্মগোপনে থেকে অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। তার ধারণা ছিল এভাবে আত্মগোপনে থেকে নিজেকে লুকিয়ে অপহরণের দায়ভার অন্যর ওপর চাপিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সংক্রান্ত ঘটনা থেকে রেহাই পাবেন বা ঘটনা অন্যদিকে ধাবিত হবে।’
তিথিকে পাওয়ার আগেই নিরঞ্জনসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২ নভেম্বর পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে সিআইডি।
জগন্নাথের এই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার দিনই তার স্বামী শিপলু মল্লিককে রাজধানীর গুলিস্তান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তিথী সরকারকে এক দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। তবে শিপলুকে কারাগারে পাঠানো হয়।
Posted ৬:৩৪ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৩ মে ২০২৪
ajkersangbad24.com | Fayzul Ahmed