অনলাইন ডেস্ক | বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট | 35 বার পঠিত
টানা ভারীবর্ষণ এবং ভারত থেকে ধেয়ে আসা আকস্মিক বন্যায় ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের ১২টি জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় এসব এলাকায় বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এসব এলাকার বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধকোটি মানুষ।
মাছের ঘের, জমির ফসল, তরিতরকারি, ফলের বাগান পানিতে তলিয়ে গেছে। অসংখ্য গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি বানের পানিতে ভেসে গেছে। গৃহপালিত পশু-পাখি রাখার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু কিছু এলাকায় মানুষের ঘরের ছাদ ও টিনের চাল ছুঁয়েছে বন্যার পানি।
এমন পরিস্থিতিতে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন লাখো কোটি মানুষ।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন বন্যাদুর্গত এলাকায় ছুটে যান এবং বানভাসী মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। এ সময় আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা শুনে আসছি, প্রতিবেশী দেশ ভারত আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু। কথিত বন্ধু ভারত ফারাক্কাসহ অভিন্ন ৫৪টি নদীতে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের বিশাল এলাকা মরুভূতিতে পরিণত করেছে।
ভারত শুকনা মৌসুমে পানি আটকিয়ে রাখে, আর বর্ষায় মওসুমে রাতের আধারে একসাথে সব গেট খুলে দেয়। গ্রীষ্মে যখন আমাদের পানির প্রয়োজন হয়, তখন তারা আমাদেরকে পানি না দিয়ে শুকিয়ে মারে। পানির অভাবে হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়। আবার বর্ষার মওসুমে যখন পানির প্রয়োজন নেই, তখন পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদেরকে বন্যায় ভাসায়। ভারত সরকারের এহেন অমানবিক কর্মকাণ্ডে আমরা হতবাক।
স্বভাবতই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে ভারত আমাদের কেমন বন্ধু!’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের একটা সরকার ছিল, সাড়ে ১৫ বছর। তারা বলত, আমাদের দেশকে সিঙ্গাপুর বানায় ছাড়ছে। এ হলো সিঙ্গাপুরের দৃশ্য। তারা বলত, এটা কানাডা, এ হলো কানাডার দৃশ্য। এগুলো সব ছিল মিথ্যা এবং ভোগাছ। তারা জনগণের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। মানুষ তার নিজের বাসায় একটা পর্দা টানালে বলত- এ ঘরে জঙ্গি আছে। ওদের মাথায়, ওদের মগজে সব সময় জঙ্গি জঙ্গি ভাব ছিল। কিন্তু আসল জঙ্গি তারাই। তারা মাথায় হেলমেট নিয়ে হাতে মুগুর নিয়ে মানুষের ওপর আক্রমণ চালায়। এরাই আসল জঙ্গি।’
আমাদের ছাত্র, তরুণ ও যুবসমাজ পুলিশের সামনে বুক চেতিয়ে, বুকের মধ্যে গুলি নিয়ে সন্ত্রাসীদের তাড়িয়েছে বাংলার বুক থেকে উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘একটা শাসক সাড়ে ১৫ বছর দেশ শাসন করলো, তাকে পালাতে হবে কেন? তারা বলতো- আমাদেরকে নাকি উন্নয়নের মহাসড়কে উঠিয়েছে। আমরা মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি এই জন্য যে, তিনি আমাদের থেকে জালিম বিদায় করেছেন। মহান রবের নিকট দোয়া করি চিরদিনের জন্য যেন এ জালিমের বিদায় হয়। আর কোনো জালিমের যেন আগমন না ঘটে। দেশ যেন সুবিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রত্যেকটা মা-বোন, ভাইয়েরা যাতে সম্মানের সাথে বসবাস করতে পারে এবং ইজ্জত, দ্বীন, ঈমান, ধর্ম নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এমন একটা পরিবেশ চাই, যেখানে দেশের প্রত্যেক ধর্মের মানুষ স্ব-স্ব ধর্মীয় অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণভাবে পালন করবে। কেউ কাউকে বাঁধা দেবে না। আফসোস বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ মুসলমান। অথচ মুসলমানদেরকেই বিগত ১৬ বছর যাবৎ সংখ্যালঘু বানিয়ে রাখা হয়েছিল। ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে অন্য সব ধর্মের মানুষ তাদের ধর্মীয় অনুশাসন নির্বিঘ্নে পালন করতে পেরেছে, তাতে বাধা ছিল না। কিন্তু একজন খতিব মিম্বরে দাঁড়িয়ে তার ইচ্ছেমতো বক্তব্য দিতে পারতেন না। ওয়াজ মাহফিলে মাইক কেড়ে নেওয়া হতো। তফসির মাহফিলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হতো। ১৪৪ ধারা জারি করা হতো। পুলিশ পাঠিয়ে নাজেহাল করে ওয়াজ-মাহফিল বন্ধ করে দেওয়া হতো। বাংলার মানুষ ভবিষ্যতে আর তা হতে দেবে না। ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাতে হাত রেখে বাংলাদেশকে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নেওয়া হবে, ইনশাআল্লাহ। এ জন্য আপনাদের, দোয়া, সাহায্য এবং ভালোবাসা চাই।’
উপরিউক্ত তিন জেলা সফরকালে আমীরে জামায়াত অসহায় বানভাসী ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের সাথে কথা বলেন এবং তাদের সার্বিক খোঁজ-খবর নেন। তিনি বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ঘুরে ঘুরে আশ্রয়গ্রহণকারী মানুষের মাঝে ফুড প্যাকেট ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন। এ সময় আমীরে জামায়াত সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান এবং বক্তব্য শেষে সকল প্রকার দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করতে আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করেন।
ফেনী জেলায় ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, জেলা আমীর একেএম শামসুদ্দিন, জেলা সেক্রেটারি মুফতি আব্দুল হান্নানসহ জেলা-উপজেলার সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীগণ।
লক্ষ্মীপুরে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা দ্বীন মোহাম্মদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, জেলা জামায়াতের আমির রুহুল আমিন ভূইয়া, নায়েবে আমির এআর হাফিজ উল্যাহ, জেলা সেক্রেটারি ফারুক হোসেন নুরনবী, সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট নাছির উদ্দিন মাহমুদ ও মহসিন কবির মুরাদ, জেলা প্রচার সম্পাদক সরদার সৈয়দ আহমদ, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক আবদুর রহমান, শহর আমির আবু ফারাহ নিশান, শিবিরের জেলা সভাপতি আরমান পাটওয়ারী, সেক্রেটারি ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।
নোয়াখালী জেলা আমীরইসহাক খন্দকারের সভাপতিত্বে সেনবাগ রাস্তার মাথা ও বেগমগঞ্জের চৌমুহনীসহ জেলার সবকটি উপজেলায় সাংগঠনিকভাবে প্রায় ৫ হাজার দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগরী আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ। জেলা সেক্রেটারি সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা বোরহান উদ্দিনের পরিচালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও জেলা নায়েব আমির মাওলানা সাইয়েদ আহাম্মদ, মাওলানা নিজাম উদ্দিন ফারুক, জেলা সহকারী সেক্রেটারি ইসমাইল হোসেন মানিক, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, জেলা প্রচার সেক্রেটারি ডা. বোরহান উদ্দিন, নোয়াখালী শহর আমীর মাওলানা মোহাম্মদ ইউছুপ, ইসলামী ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য নোয়াখালী শহর সভাপতি আবু সাঈদ সুমন। আরো উপস্থিত ছিলেন সেনবাগ উপজেলা আমীর মাওলানা ইয়াছিনুল করিম, নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল মালেক, সেক্রেটারি মাওলানা নূরুল আবছার, চৌমুহনী পৌরসভা আমীর জনাব জসিম উদ্দিন, সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, বেগমগঞ্জ উপজেলা আমীর মাওলানা মোহাম্মদ আবু যায়েদ, সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুর রহিম প্রমুখ।
নোয়াখালী জেলায় বন্যার্তদের মাঝে জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে প্রায় ৫ হাজার দুর্গতদের মাঝে চাল, ডাল, তেল, আলু, লবণ, চিনি, পেঁয়াজ, খাবার স্যালাইন, দিয়াশলাইসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণ করা হয়।
Posted ৯:৩৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০২৪
ajkersangbad24.com | Fayzul Ahmed