অনলাইন ডেস্ক | বুধবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট | 56 বার পঠিত
গত কয়দিন ধরে দেশজুড়ে মাঘের তীব্র শীত জেঁকে বসেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশা। আর গত সোমবার রাজধানীর তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসার পর নাগরিক জীবনে রীতিমতো স্থবিরতা নামতে শুরু করে। তবে গতকাল মঙ্গলবার হিমেল হাওয়া এবং কুয়াশা কিছুটা কমে দেশের বেশ কয়টি জেলায় সকাল বেলায় এক চিলতে সোনালি রোদ দেখে মানুষের মনে নেমে আসে প্রশান্তি। সোনালি এই রদ্দুরকে মনে হয় স্বর্ণের চেয়েও দামি। কবি সুকান্তের ‘প্রাথী’ কবিতার কটি পংক্তি স্মরণে আসে। ‘এক টুকরো রোদ্দুর সোনার চেয়েও মনে হয় দামী/ ঘর ছেড়ে আমরা এদিক ওদিকে যাই/এক টুকরো রোদ্দুরের তৃঞ্চায়’।
হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশার দাপট কিছুটা কমলেও এখনও দেশের ৪৩টি জেলার মানুষ শীতে বিপন্ন। আমাদের জনপদে এই একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল ২৮ বছর আগে ১৯৯৫ সালে। ওই বছর ৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিস সূত্র বলছে, ২৮ বছর পর বাংলাদেশ ফের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মুখোমুখি। ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বিপর্যস্ত মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন এই তাপমাত্রা ছিল। একইভাবে হিমেল বাতাসে কনকনে ঠান্ডায় কাঁপছে খুলনার মানুষ। একইসঙ্গে ঘন কুয়াশা ঘিরে রেখেছে এই জেলার মানুষদের। শীতের তীব্রতায় মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিরাও বিপন্ন। খুলনায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহী, নওগাঁরও একই অবস্থা। পাবনার ইশ্বরদী, ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে শীতের তাণ্ডব।
এক নজরে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে রয়েছে-টাঙ্গাইল (৮.৫), ফরিদপুর (৭.৫), মাদারীপুর (৮.৩), গোপালগঞ্জ (৭.৮), কিশোরগঞ্জ নিকলি (৮.৬), রাজশাহী (৭.৮), ঈশ্বরদী (৮), বগুড়ার বদলগাছী (৯), সিরাজগঞ্জের তাড়াশ (৮.৪), রংপুর (৯.৬), দিনাজপুর (৮.৪), নীলফামারীর সৈয়দপুর (৮.৬), ডিমলায় (৮.৫), পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া (৭.১), মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল (৯.২) চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড (৯.৪), কুমিল্লা (৯.৯), খুলনা (৯.৪), সাতক্ষীরা (৯.৫), যশোর (৮.৬), কুষ্টিয়ার কুমারখালি (৯), বরিশাল (৮.৪) এবং ভোলা (৯.৫)।
কেন এই শীতের তীব্রতা আর কেনই বা এত কুয়াশা। বৈরী আবহাওয়ার কারণ নিয়ে সময়ের আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন দেশের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান। তার অভিজ্ঞতায় বৈরী আবহাওয়ার মূল কারণ জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন। উষ্ণ আবহাওয়া একদিকে যেমন গ্রীষ্মকালকে অতি গরমের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তেমনি শীতে তাপমাত্রা একেবারে পারদের নিচে নামিয়ে দিচ্ছে।
আবদুল মান্নান বলেন, আমরা সাধারণত, ডিসেম্বর মাসকে শীতের মাস হিসেবে বলে থাকি। আর ডিসেম্বরেই শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমানে এই শীত প্রলম্বিত হচ্ছে। শীতের এই চেহারা এবার জানুয়ারি পার করে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত গড়াতে পারে। এই শীতে শৈত্যপ্রবাহ এতটা থাকার কথা নয়। কিন্তু তারপরও অস্বাভাবিক শৈত্যপ্রবাহের মূলে উপমহাদেশে যে একটি তাপবলয় তৈরি হয়েছে, তা নেপালে ঘন কুয়াশায় বিস্তৃত হচ্ছে। তারই শিকার বাংলাদেশ। তাপবলয় মূলত তাপমাত্রাকে নিম্নগামিতায় নিয়ে যাচ্ছে।
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সাগরের ঢেউ যেমন একটা সময় উচ্চতায় পৌঁছায়, তেমনি শীতকালে তার ঢেউ নিম্নগামী হবে। এই প্রলম্বিত শীতের জন্য আমাদের প্রস্তুতি থাকতে হবে। আপাতত বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সহসা শীত-কুয়াশা কমছে না।
আবহাওয়া অফিস জানায়, আজ বুধবার এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই বৃষ্টি হতে পারে গুঁড়ি গুঁড়ি। আগামী শুক্রবার থেকে বৃষ্টির আভাস কেটে গেলেও, শীতের প্রকোপ থেকে যেতে পারে। আর শৈত্যপ্রবাহ থাকবে আরও কিছু দিন। তবে সব জেলায় এই শৈত্যপ্রবাহ থাকবে না।
দেশের কোথাও কোথাও সকাল বেলায় সূর্যের দেখা মিললেও চুয়াডাঙ্গায় টানা ৪৫ দিন নিম্নমুখী তাপমাত্রা আর এলোমেলো ঠান্ডা হাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত। সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সেখানকার ছিন্নমূল মানুষদের। সেখানকার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডও ব্যাহত হচ্ছে।
সূত্র মতে, যেসব জেলায় তাপমাত্র ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে, সেখানকার প্রাথমিক স্কুল বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু কোনো কোনো স্থানে স্কুল খোলা রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকলেও সেখানে স্কুল খোলা ছিল। রাজশাহীতে ক্লাস শুরু হওয়ার ১৫ মিনিট পর স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো স্থানে সকাল থেকে ক্লাস করে দুপুরে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে বেশির ভাগ জেলায় সব স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে।
Posted ১২:৪৩ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২৪
ajkersangbad24.com | Fayzul Ahmed