অনলাইন ডেস্ক | সোমবার, ০৮ জানুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট | 135 বার পঠিত
সিলেট বিভাগের চার জেলার ১৯টি আসনের মধ্যে ১৫ আসনে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। বাকি চার আসনে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা; এর মধ্যে ৩ জনই আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন। অপর এক আসনে বিজয়ী হতে স্বতন্ত্র প্রার্থী আঞ্জুমানে আল ইসলাহর সভাপতি। রবিবার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। শহরের ভোটকেন্দ্রগুলোতে সকালে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল কম; তবে উপজেলার ভোটকেন্দ্র উপস্থিতি ছিল। এসব কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তরা জানিয়েছেন সকালে ঠান্ডার কারণে ভোটার কম, বেলা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে বাড়বে ভোটরদের উপস্থিতি।
এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটি জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীরা। আর একটিতে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আঞ্জুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা হুছাম উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী। রবিবার ১০টার পরে সিলেট জেলা রিটানিং কর্মকর্তা শেখ রাসেল হাসান জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন। প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী সিলেট-১ আসনে ড. একে আব্দুল মোমেন (নৌকা), সিলেট-২ আসনে শফিকুর রহমান চৌধুরী (নৌকা), সিলেট-৩ আসনে হাবিবুর রহমান (নৌকা), সিলেট-৪ আসনে ইমরান আহমদ (নৌকা), সিলেট-৫ আসনে মাওলানা হুছাম উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী (কেটলি) ও সিলেট-৬ আসনে বিজয়ী হয়েছেন নুরুল ইসলাম নাহিদ (নৌকা)।
সিলেট-১ আসনে (নগর-সদর) বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ে তুলতে পারেননি প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীরা। ড. মোমেন ভোট পেয়েছেন ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৫৪৬টি ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দী ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ফয়জুল হক মিনার প্রতীকে ভোট পেয়েছেন মাত্র ২ হাজার ১৯৩টি ভোট।
সিলেট-২ আসনে (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) চার প্রার্থীর ভোট বর্জনের দিনে ৭০ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন ৭৮ হাজার ৩৮৮ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান মুহিব ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ১৬ হাজার ৬৬১ ভোট। তবে ভোটের দিন দুপুরের পরই অনিয়মের অভিযোগ প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী মুহিবুর রহমান, ইয়াহইয়া চৌধুরী, মোকাব্বির খান ও আব্দুর রব নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেন।
সিলেট-৩ আসনে (দক্ষিণসুরমাÑফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ) আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান হাবিব নৌকা প্রতীকে ৭৯ হাজার ৬৫১ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল ট্রাক প্রতীকে ৩৫ হাজার ৮৩৬ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে অনিয়মের অভিযোগে ভোট বর্জন করেছেন ডা. দুলাল ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান।
সিলেট-৪ আসনে (কোম্পানীগঞ্জ-গোয়াইনঘাট-জৈন্তাপুর) বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ। তিনি নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ৭ হাজার ৯৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল বিএনপির আবুল হোসেন সোনালী আঁশ প্রতীকে পেয়েছেন মাত্র ৪ হাজার ১১ ভোট। তবে এই আসনে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে ভোট প্রত্যাখ্যান করেন আবুল হোসেন।
সিলেট-৫ আসনে (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) কেটলি প্রতীকে ৪৭হাজার ১৫৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা হুছাম উদ্দিন চৌধুরী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ পেয়েছেন ৩২ হাজার ৯৭৩ ভোট। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. আহমদ আল কবির ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ২০ হাজার ২৩০ ভোট।
সিলেট-৬ আসনে (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ৫৭ হাজার ৭৫৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন ঈগল প্রতীকে ৩৯হাজার ৪৮৮ ভোট। তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরী পেয়েছেন ১০ হাজার ৯৩৬ ভোট।
মৌলভীবাজার: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজারের চারটি আসনের মধ্যে সবগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। ভোট গণনা শেষে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা উর্মি বিনতে সালাম রবিবার রাতে এ ফল ঘোষণা করেন।
মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ি) আসনে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩০৮ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শাহাবুদ্দিন আহমেদ নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী আহমেদ রিয়াজ লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৮ ভোট।
মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে আওয়ামী লীগের শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল নৌকা প্রতীকে ৭২ হাজার ৭১৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী একে এম শফি আহমেদ সলমান ট্রাক প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৫ হাজার ৫৫২ ভোট। আর তৃণমূল বিএনপির আর এম এম শাহীন সোনালী আঁশ প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ১১ হাজার ৪৪৯টি।
মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর) ভোট কেন্দ্রে নৌকা মার্কার প্রার্থী মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান পেয়েছেন ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮৪৬ ভোট। তার নিকটতম প্রার্থী জাতীয় পাটির মো. আতাফুর রহমান লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ হাজার ৬৯৮ ভোট।
মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আওয়ামী লীগের আব্দুস শহীদ ২ লাখ ১২ হাজার ৪৯১ ভোট জয় পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী আব্দুল মুহিত হাসানি বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট থেকে মোমবাতি প্রতীকে ৫ হাজার ৩৯০ ভোট পেয়েছেন।
সুনামগঞ্জ: জেলার ৫টি আসনের মধ্যে ৪টিতে আওয়ামী লীগ, একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। প্রার্থীদের এজেন্ট ও স্থানীয় পর্যায়ে তথ্যের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জ-১ আসনে (তাহিরপুর-জামালগঞ্জ-মধ্যনগর-ধর্মপাশা) আওয়ামী লীগের প্রার্থী রঞ্জিত চন্দ্র সরকার ১ লাখ ৯৯৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন কেটলি প্রতীকে ৪৯ হাজার ৯৪১ ভোট ও ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম আহমদ ৪৩ হাজার ৭১০ ভোট পেয়েছেন।
সুনামগঞ্জ-২ আসনে (দিরাই-শাল্লা) কাঁচি প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্ত। তিনি কাঁচি প্রতীকে ৫০ হাজার ২৯৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী। নৌকা প্রতীকে আল আমিন ৪২ হাজার ৭৫ ভোট।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে (শান্তিগঞ্জ-জগন্নাথপুর) আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান পেয়েছেন ১ লক্ষ ২৬ হাজার ৯৯৮টি ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাড. শাহীনূর পাশা চৌধুরী পেয়েছেন মাত্র ৪ হাজার ৯৫ ভোট।
সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. মোহাম্মদ সাদিক ৯০ হাজার ৫৯০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ পেয়েছেন ৩১ হাজার ৭২১ ভোট। এদিকে, সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার) আসনে মহিবুর রহমান মানিক স্বতন্ত্র প্রার্থীর শামীম চৌধুরীর চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা যায়।
হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের ৪টি আসনের মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। অপর দুটিতে জিতেছেন আয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী। প্রার্থীদের এজেন্ট ও স্থানীয় পর্যায়ে তথ্যের ভিত্তিতে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে জয়লাভ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কেয়া চৌধুরী (ঈগল)। এ আসনে মহাজোট সমর্থিত জাতীয় পার্টির প্রার্থী মুকিত চৌধুরী বাবুকে হারিয়েছেন তিনি। কেয়া চৌধুরী ঈগল প্রতীকে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৭৫ হাজার ৫২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু পেয়েছেন ৩০ হাজার ৬০৩ ভোট।
হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুহেল। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ খানকে হারিয়েছেন তিনি। ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল ৯৯ হাজার ৯৪৩ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি মো. আব্দুল মজিদ খান পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৬০৬ ভোট।
হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই) আসনে জয়লাভ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু জাহির। জাহির পেয়েছেন ১ লাখ ৬০ হাজার ৬০৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এমএ মুমিন চৌধুরী বুলবুল পেয়েছেন ৪ হাজার ৭৬ ভোট।
হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে বড় ব্যবধানে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী, বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীকে হারতে হয়েছে তার কাছে। এ আসনে ৫ লাখ ১২ হাজার ৩০৮ জন ভোটারের মধ্যে ১৭৭টি কেন্দ্রে ভোট দেন ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪৩৭ জন। এর মধ্যে ব্যারিস্টার সুমন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহবুব আলী পেয়েছেন মাত্র ৬৯ হাজার ৫৪৩ ভোট।
Posted ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৮ জানুয়ারি ২০২৪
ajkersangbad24.com | Fayzul Ahmed