রেজওয়ান আহমদ | বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ | প্রিন্ট | 107 বার পঠিত
সিলেটের চা বাগানগুলো দেখতে অনেক সুন্দর। তাই দেশ ও বিদেশ থেকে পর্যটকরা দলবেঁধে চা বাগানের ছুটে আসেন নতুন পাতার সুগন্ধ ঘ্রান নিতে।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটি দিন ফটো সাংবাদিকরাও উৎসব করল চা বাগানে। ফটো সাংবাদিকরা বছর জুড়েই থাকেন ব্যস্ত, ঘটনা, দুর্ঘটনা ও সামাজিক অনুষ্ঠানের ছবি মিডিয়ায় প্রকাশ করতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্যামেরা নিয়ে ছুটে চলেন তারা। পরিবার নিয়ে আনন্দ করার সময় থাকে না অন্যের খবর প্রকাশ করতে গিয়ে, বছরের দুটি ঈদে পরিবার নিয়ে আনন্দ করার সুযোগ আসে। এই দুটি ঈদ হচ্ছে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা।
গত ১১ এপ্রিল ঈদুল ফিতর উদযাপন হয়। এই ঈদুল ফিতরের আনন্দ আরো বাড়াতে বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির উদ্যোগে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদ পূর্ণমিলনীর আয়োজন করা হয়। রমজান থেকেই শুরু হয় প্রস্তুতি। গত ২২ এপ্রিল বিকেলে মোবাইল ফোনে কল দিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ভাই বললেন আগামী (গত) ২৫ এপ্রিল সংগঠনের ঈদ পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠান আছে থাকতে হবে, বললাম ঠিক আছে।
গত ২৫ এপ্রিল সকালে ঘুম থেকে উঠে নুরুল ভাইকে ফোন দিলাম, ফোন রিসিভ করার পর বললাম কোথা থেকে যাওয়া হবে তিনি বললেন, মধুবন মার্কেটের সামনে ১১টার ভিতরে আসার জন্য এখান থেকেই গাড়ি দিয়ে যাত্রা শুরু হবে আলী বাহার চা বাগানের উদ্দেশ্যে। রেডি হয়ে চলে আসলাম মধুবন মার্কেটের পঞ্চম তলায় সংগঠনের অফিসে। এসেই দেখলাম বসে আছেন নুরুল ভাই, মামুন ভাই। পড়ে এক এক করে আসলেন দুলাল ভাই, কয়েস ভাই, নাজমুল কবির পাভেল ভাই, আনিস ভাই, সুব্রতদা, শহিদুল ভাই, বিলকিস আক্তার সুমি ও রত্না আপা। সবাই পরিবার নিয়ে এসেছেন, এরই মধ্যে সংগঠনের অফিস জমে উঠেছে হইহুল্লোড় আনন্দে। সবাই একে অপরের কথা নিয়ে হাসাহাসি করছে। তখন ঘড়ির কাঁটায় বেজে গেল ১১ টা, এর মধ্যে গাড়ি চলে এসেছে। আমরা তখন সংগঠনের অফিসে সবাই বসে রয়েছি তখন গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কল দিলেন নুরুল ভাই, ফোন রিসিভ করার পর বললেন অফিস থেকে সবাইকে নিচে নামার জন্য। সবাই নিচে নেমে গাড়িতে উঠে পড়লাম গাড়ি ছাড়লেন চালক। সামনে এলো রুবেল মোবাইল হাতে নিয়ে ভিডিও ধারণ করতে লাগলো এসময় আনিস ভাইও মোবাইল হাতে নিয়ে সেলফি তুলতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর শহীদুল ভাই মোবাইল বের করে আবার সেলফি তুললো এভাবেই চলছিল গাড়িতে সবাই কে নিয়ে আনন্দ। শুরু হলো ঈদ পূর্ণমিলনী উৎসব। গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে আলী বাহার চা বাগানের দিকে, নগরীর যানজট পেরিয়ে চা বাগানের সড়কে টুকু পরলো গাড়ি। সড়কের দুই পাশেই চায়ের বাগান। গাড়ি চলছে আর সবাই চায়ের পাতা দেখতে তাকিয়ে রয়েছে। দুপুর ১২টা দিকে গিয়ে পৌঁছলাম যে স্থানটিতে আয়োজন করা হয়েছে ঈদ পূর্ণমিলনী। এক এক করে গাড়ি থেকে সবাই নেমে হেঁটে গেলাম সিলেটের শহরতলীর আলী বাহার চা-বাগান বাংলোয়। সেখানে গিয়ে দেখলাম আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন শাহিন ভাই ও রেজা রুবেল, সবাইকে হাততালি দিয়ে অভিবাদন জানালো তারা। তারপর এক এক করে বাকি সদস্যরা পরিবার নিয়ে আসতে শুরু করলেন, কিছুক্ষণ পর সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আতাউর আতা ফটো সাংবাদিকতা শুরুর পর থেকেই যে মোটরসাইকেলটি চালিয়ে আসছেন সেই মোটরসাইকেলটি নিয়ে আসলেন। সবার সাথে কৌশল বিনিময় করলেন। মুহূর্তের মধ্যে জমে গেল ঈদ পূর্ণমিলনী উৎসব। কেউ সেলফি তুলছে, আবার কেউ ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছে। হঠাৎ করে মাইকে ঘোষনা এলো খেলা শুরু হবে যারা খেলায় অংশগ্রহণ করতে চাও আমাদের সাথে যোগাযোগ করো। প্রথমেই শিশুদের নিয়ে শুরু হল ঝুড়িতে বল ফেলা। অংশগ্রহণকারীরা সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ল, যারা জুড়িতে বল ফেলতে পারচে তাদের হাততালি দিয়ে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। শিশুদের খেলা শেষে শুরু হয় মহিলাদের ম্যাজিক চেয়ার খেলা। গান ভেজে উঠার সাথে সাথে প্রতিযোগিরা চেয়ার পাশে ঘুরতে থাকেন। হঠাৎ করে গান বন্ধ, যারা চেয়ারে বসতে পারবে তাঁরা খেলায় ঠিকে থাকবে আর যারা বসতে পারবে না তাঁরা খেলা থেকে বাদ পরবে। এভাবেই এক এক করে খেলা থেকে আউট হচ্ছেন প্রতিযোগি। আর দর্শকদের হাততালির শব্দ বাড়ছে। অন্যদিকে ঈদ পূনর্মিলনী উৎসব মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। প্রতি খেলায় তিন জন করে বিজয়ী হচ্ছেন। তারপর শুরু হলো বালিশ খেলা, মহিলা প্রতিযোগিরা গোল হয়ে চেয়ারে বসলেন। তাদের একজনের হাতে দেয়া হলো বালিশ, গান শুরু হলো খেলাও শুরু হলো। প্রতিযোগিরা বালিশ একে অপরের হাতে দিচ্ছেন আর বালিশও ঘুড়ছে। গান বন্ধ হলে যার হাতে বালিশ থাকবে সে খেলা থেকে বাদ যাবে। এভাবেই খেলা থেকে এক এক জন বাদ পরছে। শেষে বিজয়ী হলেন তিনজন। খেলা শেষ হলো বিকেল ৩টায়, এবার খাবারের পালা। বাবুর্চি দিয়ে রান্না করা হয়েছে সুস্বাদু খাবার, তার মধ্যে রয়েছে মাছ, ডাল, মোরগের মাংস দিয়ে আলু ভুনা, ভাত, ফিন্নি সহ গরমের প্রশান্তি পেতে কোমল পানীয়। টেবিলের উপরে সাজানো হয়েছে খাবার। সবাই হাতে পেলেইট নিয়ে লাইনে দাঁড়ালেন, এক এক করে সবাই খাবার নিলেন। খাবার শেষে শুরু হলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রথমেই গান পরিবেশন করলেন ফটো সাংবাদিক আজমল আলী। তারপর পরিবারের শিশুরা গান করলেন। হঠাৎ করে মাইকে ঘোষণা এলো এখন গান পরিবেশন করবেন আনিস মাহমুদ, সবাই হাত তালি দিলো। গান শুনে সবাই বললো আরেকটি গান হবে। আবারও মাইকোফোন হাতে নিলেন আনিস ভাই, গান গাইলেন আরেকটি। এরই মধ্যে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা আসতে শুরু করলেন। সবাই আসার পর শুরু হলো আলোচনা।
এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইউসুফ আলীর সভাপতিত্ব ও সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল ইসলামের পরিচালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)’র কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম সিআইপি, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)’র অতিরিক্ত কমিশনার মাসুদ রানা, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম।
অতিথিরা তাদের বক্তব্যে এসোসিয়েশনের প্রশংসা করলেন। পরিবারের সদস্যরাও আনন্দ পেলেন এমন একদিন উৎসব করতে পেরে। দিনব্যাপী বিভিন্ন খেলায় বিজয়ীরা অতিথিদের হাতে থেকে পুরস্কার নিলেন। পুরস্কার বিতরণের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো ফটো সাংবাদিকদের ঈদ পূনর্মিলনীর মিলন মেলা উৎসব।
ঈদ পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আতাউর রহমান আতা, এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবির লিটন, সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহীন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ মাহমুদ হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুব্রত দাস, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পল্লব ভট্টাচার্য্য, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক রেজা রুবেল, কার্যনিবাহী কমিটির সদস্য শেখ আশরাফুল আলম নাসির, আশকার ইবনে আমিন লস্কর রাব্বী, আনিস মাহমুদ, এটিএম তুরাব, সদস্য দুলাল হোসেন, আফতাব উদ্দিন, আনিস রহমান, মামুন হাসান, নাজমুল কবির পাভেল, শাহ মো. কয়েস আহমদ, বিলকিস আক্তার সুমি, এএইচ আরিফ, বেলায়েত হোসেন, জাবেদ আহমদ, শংকর দাস, রত্না আহমদ তামান্ন, এসএম রফিকুল ইসলাম সুজন, শিপন আহমদ, আজমল আলী, এইচ এম শহিদুল ইসলাম, মামুন হোসন, একরাম হোসন, ফটো সাংবাদিক রেজওয়ান আহমদ, রুবেল মিয়া।
Posted ৭:৪৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
ajkersangbad24.com | Fayzul Ahmed