বৃহস্পতিবার ১৩ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

আগে বিচার, তারপর অন্য কাজ : ডা. শফিকুর রহমান

অনলাইন ডেস্ক   |   শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   52 বার পঠিত

আগে বিচার, তারপর অন্য কাজ : ডা. শফিকুর রহমান

আগে বিচার, তারপর অন্য কাজ; ধর্ম যার যার, বাংলাদেশ সবার মন্তব্য করে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা আমাদের এ দেশে মেজরিটি-মাইনরিটি একেবারেই মানি না।
তিনি বলেছেন, সমাজের মধ্যে সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু বলে যুদ্ধ লাগিয়ে রাখা হয়েছিল।
এখানে মেজরিটি-মাইনরিটি বলে যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন ধর্মের ভাই বোনদের নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের সম্পদ গ্রাস করা হয়েছে। জায়গা জমি দখল করা হয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আর দোষ দেওয়া হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর ওপর।

দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে শফিকুর রহমান এ কথা বলেন।

জামায়াতে ইসলামীর কক্সবাজার জেলা শাখা আয়োজন করে এ সম্মেলন। সম্মেলন ঘিরে জনস্রোত লাখ ছাড়িয়ে যায়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াত আমির বলেন, বাংলাদেশে যারাই জন্মগ্রহণ করেছেন, তারা গর্বিত নাগরিক। ইসলাম কারও ওপর জোর খাটানোর কোনো অধিকার রাখে না। অন্য ধর্মও কোনো ধর্মের ওপর জোর খাটাতে পারবে না, যদি সেটি ধর্ম হয়ে থাকে।
ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে কোথায় কোথায় জামায়াতের কর্মীরা এসব অপকর্ম করেছেন, তা সুস্পষ্ট করে নাম-ঠিকানা দিয়ে আমাদের সাহায্য করুন। আপনাদের কথা দিচ্ছি, ন্যায় বিচার আমরা আপনাদের হাতে তুলে দেব। আমরা নিশ্চিত যে, এই অপকর্মের সঙ্গে আমাদের সহকর্মীরা জড়িত না।
২৪ -এর অভ্যুত্থানকারী প্রজন্মকে সম্মান জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, তোমাদের নেতৃত্বে আমরা ছিলাম। সাড়ে ১৫ বছর আমরা আমাদের নেতৃত্বে আন্দোলন করেছি। কিন্তু স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে পারিনি। এটাই সত্য কথা। কিন্তু সাড়ে ১৫ বছরের ধারাবাহিকতায় তোমাদের নেতৃত্বে জাতি শেষ আঘাতটা ফ্যাসিজমের ওপর দিয়েছিল এবং জাতি সফল হয়েছিল।

আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, অনেকে আবার নিজেরা কৃতিত্ব দাবি করেন। আমি মাস্টারমাইন্ড, অমুক ভাই মাস্টারমাইন্ড, তমুক নেতা মাস্টারমাইন্ড। মহাপরিকল্পনাকারী মহান রাব্বুল আলামিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়েছে। এখানে কোনো মাস্টারমাইন্ড আমরা বিশ্বাস করি না।

ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ স্বাধীনতা অর্জন করার পর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আমরাও সেভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াব, এটা ছিল আমাদের আশা। কিন্তু বাস্তবে সে আশা পূরণ হয়নি। যদি বলি একেবারেই পূরণ হয়নি, তাহলে কথাটা সত্য হবে না। কিন্তু পূরণ হবার বিশাল প্রত্যাশা মানুষের ছিল। একটা স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা আমরা এখনও পেলাম না।

নিজ দলের প্রতি অবিচারের প্রসঙ্গ টেনে জামায়াতের আমির বলেন, আইনের অঙ্গনে এসে যারা বেআইনি কর্মকাণ্ড করেছেন, প্রধান বিচারপতির দরজায় এসে লাথি দিয়েছিল; আওয়ামী লীগ তাদের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বানিয়েছিল। এদের কাছ থেকে বিচার পাওয়া যাবে না -এটাই স্বাভাবিক। তাই অবিচারের শিকার হয়ে আমাদের ১১ জন শীর্ষ নেতা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। বিচারের নামে তাদের ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাস করি না, তবে আমরা অবশ্যই অপকর্মের বিচার চাই। আমাদের কথা স্পষ্ট। সবগুলো খুনের বিচার হতে হবে। বিশেষ করে ২৪ -এর গণহত্যার বিচার অবশ্যই হতে হবে। আগে বিচার তারপর অন্য কাজ। এ বিচার না হলে শহীদের আত্মা কষ্ট পাবে।

দীর্ঘদিন ধরে বন্দি জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি দাবি জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘সব কিছুই মহান আল্লাহর পরিকল্পনা, যার বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্র-জনতা। এখানে কোনো মাস্টারমাইন্ড জামায়াত ইসলামী বিশ্বাস করে না।’

জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সারা দেশে জামায়াতের সমস্ত অফিস বন্ধ, নিবন্ধন বাতিল, প্রতীক বাতিল করে সর্বশেষ দলকে নিষিদ্ধ করেছিল। আল্লাহর অসীম রহমতে ০৫ আগস্ট নিষিদ্ধ হয়ে দেশ থেকে তাদেরই পালিয়ে যেতে হয়েছে। এটাই আল্লাহর বিচার। সম্মেলনে কক্সবাজার জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ নুর মোহাম্মদ আনোয়ারী সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান, চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহ ও ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এনামুল হক মন্জু।

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জাহিদুর রহমানের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি পরিমল কান্তি শীল, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মুফতি হাবিবুল্লাহ, অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন ফারুকী, জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি ও কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট শাহ জালাল চৌধুরী, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী, শামসুল আলম বাহাদুর, কক্সবাজার শহর জামায়াতের আমির আব্দুল্লাহ আল ফারুক, কক্সবাজার জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি আব্দুর রহিম নুরী।

দীর্ঘদিন পর বিশাল কর্মী সম্মেলনে একত্রিত হয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছেন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। কর্মী সম্মেলন ঘিরে রঙিন ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণে সেজেছিল পুরো শহর। এ কর্মী সম্মেলনে জেলার ৪ সংসদীয় আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থীদের জয়ী করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়।

Facebook Comments Box

Posted ১০:০৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ajkersangbad24.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক
ফয়জুল আহমদ
যোগাযোগ

01712000420

fayzul.ahmed@gmail.com