বুধবার ২৩শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

আমতলীতে রিমালের পানিতে সাড়ে ৩শ’ হেক্টর জমির আউশের বীজতলার সর্বনাশ

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি   |   সোমবার, ০৩ জুন ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   31 বার পঠিত

আমতলীতে রিমালের পানিতে সাড়ে ৩শ’ হেক্টর জমির আউশের বীজতলার সর্বনাশ

ছবি : সংগৃহীত

আমতলীতে রিমালের পানিতে দেড় সপ্তাহ ধরে আউশের বীজতলা তলিয়ে থাকায় তা পচে নষ্ট হওয়ায় কৃষকের সর্বনাশ হয়েছে। উপজেলার শত শত কৃষকের ঘামে শ্রমে তৈরী করা নীচু জমির সাড়ে ৩শ’ হেক্টর বীজতলা পচে নষ্ট হওয়ায় চলতি মৌসুমের আউশ আবাদ নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন কৃষকরা।

আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভায় এবছর ৭৫৫ হেক্টর জমিতে আউশের বীজতলা করা হয়েছে। আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৩শ’ ২৫ হেক্টর জমি। ফসলের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৯শ’ ৭৫ মেট্টিক টন । কিন্তু কৃষকের আউশ আবাদের বাধা হয়ে দারায় রিমাল। রিমালের সময় অতি বৃষ্টি এবং পায়রা নদীতে অধিক উচ্চতায় জলোচ্ছাস এবং বাঁধ ধসে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার ফলে আউশের বীজতলা ৩-৪ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। সপ্তাহখানেক ধরে এভাবে বীজতলা ২ ফুট পানির নীচে থাকায় উপজেলার অধিকাংশ কৃষকের বীজতলা পচে সম্পূর্ন নষ্ট হয়ে গেছে। সরকারী হিসেবে চাষ করা ৭৫৫ হেক্টর বীজতলার মধ্যে ১৭৯ হেক্টর নষ্ট হওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে অর্ধেক বীজতলা প্রায় সাড়ে ৩শ হেক্টর নষ্ট হয়েছে বলে সরেজমিন চিত্রে দেখা গেছে। কৃষকরা জানান, আউশ রোপনের এখন ভরা মৌসুম। রিমালের আগে অনেকে তাদের আউশ রোপন শুরু করেছে। এই মুহুর্তে বীজতলা নষ্ট হওয়ায় আমাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। এই মুহুর্তে নতুন করে বীজতলা তৈরী করে আর আউশ রোপন করতে পারবো না। এতে আমাদের সামনে অনেক দুর্দিন অপেক্ষা করছে।

সোমবার (৩ জুন) সকালে উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের কুকুয়া, কালিপুরা, কৃষ্ণনগর, আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের সোনাখালী, গাজীপুর, হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া, উত্তর তক্তাবুনিয়, দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া, গুরুদল, আমতলী সদর ইউনিয়নের ছোটনীলগঞ্জ, চলাভাঙ্গা, চাওড়া ইউনিয়নের বেতমোর বৈঠাকাটা, আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ঘোপখালী, পশুরবুনিয়া ও বালিয়াতলী গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে এখনো শত শত হেক্টর আউশের বীজতলা প্রায় ২ফুট পানির নীচে তলিয়ে রয়েছে। প্রায় দেড় সপ্তাহখানেক ধরে বীজতলা এভাবে পানিতে তলিয়ে থাকায় তা পচে দুর্গন্দ ছড়াচ্ছে।

কুকুয়া ইউনিয়নের কুকুয়া গ্রামের কৃষক মো. ইউনুছ মীরা বলেন, বইন্যার আগে আউশ লাগানের লইগ্যা ৩৫ শতাংশ জমিতে বীজ তলা করি। বইন্যায় সব তলাইয়া যায়। এহনো দেড় দুই আত পানি জইম্যা রইছে। পানি জইম্যা থাহায় মোর সব বীজতলা পইচ্যা নষ্ট অইয়া গ্যাছে। এহন টাহা আর বীজ পামু কই। আর কি দিয়া ধান লাগামু হেই চিন্তায় আছি। একই গ্রামের অনেছ খা বলেন, মোর ১০ কড়া জমির বীজ নষ্ট অইয়া গ্যাছে।

হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া গ্রামের ফজলু প্যাদা বলেন, মুই ৩০ শতাংশ জমিতে ৭৫ স্যার ধান হালাইছি। বইন্যার পানি জইম্যা হেইয়াসব পইচ্যা নষ্ট অইয়া গ্যাছে। তিনি আরো বলেন, এহন কুম্মে বীজ ধান পামু। হেইয়ার পর আবার বীজ কইর‌্যা চাষ করা মোগো লইগ্যা ব্যামালা কষ্টের।

চাওড়া ইউনিয়নের বৈঠাকাটা গ্রামের মাসুম গাজী, জসিম খান, আমতলী সদর ইউনিয়নের আলতাফ হাওলাদার, ঘোপখালী গ্রামের হোচেন বয়াতি বলেন, ব্যামালা টাহা খরচ কইর‌্যা আউশের বীজ চাষ হরছি। বইন্যায় সব নষ্ট অইয়া গ্যাছে। এহন মোরা আউশ ধান আর লাগাইতে পারমু না। ধান লাগাইতে না পারলে গুরাগারা লইয়া সামনের দিনে কি খামু হেই চিন্তায় আছি।

আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইছা বলেন, এবছর আমতলীতে রিমালের তান্ডবে বাধ ভেঙ্গে পায়রা নদীর জলোচ্ছাস এবং অতিরিক্ত বৃষ্টি পানি বীজতলায় জমে থাকায় ১৭৯ হেক্টর আউশের বীজতলা সম্পূর্ন নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, বিপুল পরিমান আউশের বীজতলা নষ্ট হওয়ায় এবছর আউশ ধান চাষের লক্ষমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। এতে ফলনেও বিপর্যয় হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, রিমালের তান্ডবে আমতলী উপজেলার কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপন করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থপনা অধিদপ্তর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বরাদ্দ পাওয়া গেলে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হবে।

Facebook Comments Box

Posted ১০:১১ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৩ জুন ২০২৪

ajkersangbad24.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক
ফয়জুল আহমদ
যোগাযোগ

01712000420

fayzul.ahmed@gmail.com