বৃহস্পতিবার ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

তরুণীর প্রেমের ফাঁদে নিঃস্ব সুনামগঞ্জের দুই লন্ডনী যুবক

জগন্নাথপুর প্রতিনিধি   |   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   85 বার পঠিত

তরুণীর প্রেমের ফাঁদে নিঃস্ব সুনামগঞ্জের দুই লন্ডনী যুবক

ফাইল ছবি

যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য প্রেমের ফাঁদে ফেলে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি/ভিডিও ধারণের পর ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে। তবে যুক্তরাজ্যে গিয়েও শেষ হয়নি প্রতারণা! ফাঁদে ফেলে একাধিক বিয়ে করে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে সর্বস্ব লুটে নিয়ে লন্ডনি যুবকদের নিঃস্ব করাই যেন সুনামগঞ্জের এ তরুণীর নেশা।

জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার গিরিশনগর গ্রামের শাহজাহান মিয়া ও শিরিনা বেগম দম্পতির মেয়ে ভয়ংকর প্রতারক শারমিন আক্তার সীমা নামের এ তরুণীর ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন একাধিক যুক্তরাজ্য প্রবাসী যুবক ও তাঁদের পরিবার।

সম্প্রতি ওই তরুণীর বিরুদ্ধে তালাক না দিয়ে একাধিক বিয়ে ও বিয়ের নামে যুবকদের ফাঁদে ফেলে অর্থ-সম্পদ লুট, প্রতারণা-জালিয়াতি ও নিরীহ লোকদের মামলায় ফেলে হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগে যুক্তরাজ্যের হোম অফিসে পৃথক দুটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন ভুক্তভোগী দুই যুবক।

তাঁরা হলেন- শান্তিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাইফুর রহমান ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী হাবিবুর রহমান। তাঁদের দাবি, সীমার এ সকল অপকর্মের মূল হোতা তার কথিত নানা যুক্তরাজ্য প্রবাসী শফিকুল ইসলাম। এছাড়া জড়িত রয়েছেন সীমার মা-বাবাও।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ, চার বছর আগে ফেসবুকে সীমার সঙ্গে পরিচয় হলে সীমা নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাঁর বাবা সিলেট শহরের একজন বড় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। এসময় ভিডিও কলে সীমা তার সঙ্গে কথা বলে নগ্ন ছবি দেখিয়ে তাকে উত্তেজিত করে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির ভিডিওচিত্র ধারণ করে রাখে। এক পর্যায়ে সীমা বিয়ের জন্য চাপ দিলে সাইফুর তাঁর পরিবারের লোকদের সীমার বাড়িতে পাঠান। তাঁরা জানতে পারেন সীমার বাবা একটি কারখানার দারোয়ান। তারা একটি কলোনিতে থাকেন। সীমার দেওয়া তথ্যের সাথে কোনো মিল না পাওয়ায় সাইফুর ও তাঁর পরিবার বিয়েতে অসম্মতি প্রকাশ করেন। তখন সীমা আত্মহত্যার হুমকিসহ ভিডিও কলে ধারণ করা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি-ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখান। এতে ভয় পেয়ে সাইফুর সীমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন। তিনি ২০২১ সালের জুন মাসে সীমাকে বিয়ে করেন। আট মাসের মধ্যে স্টুডেন্ট ভিসায় সীমাকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে যান।

ভুক্তভোগী যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাইফুর রহমান বলেন, বিয়েসহ সীমাকে যুক্তরাজ্যে আনতে আমার প্রায় ৬০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাজ্যে আসার পর সীমা পুরোদমে বদলে যায়। সে আমাদের বাসার মালিক ব্রিটিশ এক নাগরিকের সঙ্গে পরকিয়ায় লিপ্ত হয়ে তাঁর কাছ থেকে দামি দামি উপহার লুটে নিতে থাকে। বিষয়টি আমার কাছে ধরা পড়ায় আমাদের মধ্যে কলহ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে সে ২০২২ সালের আগস্ট মাসে আমার বাসার সকল দামি জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। মান-সম্মানের ভয়ে আমি তখন আর মামলা-মোকদ্দমায় জড়াইনি।

এদিকে, সাইফুলের বাসা থেকে নিয়ে আসা জিনিসপত্র বিক্রি করে সীমা তার ছোট ভাইকে স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাজ্যে নিয়ে যান এবং কথিত নানা শফিকের বাসায় বসবাস শুরু করেন। ততদিনে সীমার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পরে যুক্তরাজ্যে স্থায়ী ভিসা পেতে অপর যুবক যুক্তরাজ্য প্রবাসী হাবিবুরকে প্রতারণার ফাঁদে পেলে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিয়ে করেন সীমা। বিয়ের পরেই কৌশলে ভিসা জটিলতার কথা বলে হাবিবুরের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

বিয়ের এক বছর পর সীমার পূর্বের বিয়ে ডিভোর্স না হওয়ার তথ্য গোপন ও সকল প্রতারণা বিষয়ে জানতে পারেন হাবিবুর। এতে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। এরপর একইভাবে হাবিবুরের ঘর থেকে দামি সব জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যান সীমা। তবে এবার শুধু পালিয়ে গিয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি। চলতি বছরের ১৯ মার্চ লন্ডনের বেথনাল গ্রিন পুলিশের কাছে হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেন। যার প্রেক্ষিতে সীমা যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসের বৈধতা লাভ করেন।

ভুক্তভোগী যুক্তরাজ্য প্রবাসী হাবিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ থেকে তার মায়ের মাধ্যমে আমার বোনের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে সীমা তার সঙ্গে মুঠোফোনে প্রতিদিন কথা বলে তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে জানিয়ে অসহায়ত্বের কথা বলে কান্নাকাটি করত। যুক্তরাজ্য প্রবাসী একটি ছেলে বিয়ের জন্য দেখে দিতে কাকুতিমিনতি করে। এতে যুক্তরাজ্য প্রবাসী আমার বোনের মন গলে যায়, তিনি আমার কথা বলেন। এসময় কৌশলে আমার ফোন নম্বর নিয়ে তাঁর পূর্বের স্বামীর মতো আমাকেও তাঁর প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেন। বিয়ে ও তাকে যুক্তরাজ্যে স্পাউস ভিসায় বৈধ করতে ২৫ লাখ টাকা খরচ হয়। যুক্তরাজ্যের আইনে স্পাউস ভিসার মেয়াদ আড়াই বছর। এরপর ফি পরিশোধ করে মেয়াদ বাড়ানো হয়। এভাবে ১০ বছর পর স্থায়ী বা ব্রিটিশ সিটিজেন হতে হয়। কেউ যদি নির্যাতন বা ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার হয় তাহলে হোম অফিস তাকে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ দেয়। ইতিমধ্যে পূর্বের স্বামীকে ডিভোর্স না দিয়ে আমাকে বিয়ে করা ও আগের স্বামীর ঘর থেকে টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে আমাদের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। এসময় সীমা কথিত নানা শফিকের পরামর্শে আমার বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে বৈধভাবে যুক্তরাজ্যে বসবাসের সুযোগ পান।

তিনি বলেন, সীমা দেশে থাকাকালীন তার রূপ-যৌবন দেখিয়ে যুবকদের নিঃস্ব করেছেন। অনেকের সঙ্গে তার দৈহিক সম্পর্ক রয়েছে। আমি এবং সাইফুর সীমার প্রতারণায় সর্বস্ব হারিয়ে এখন পুরোই নিঃস্ব। তাই আমরা হোম অফিসে সীমার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছি। আমরা এর বিচার চাই। সীমার সকল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে শফিক জড়িত। আমরা চাই আমাদের মতো আর যেন কেউ নিঃস্ব না হয়।

এ ব্যাপারে জানতে একাধিকবার সীমার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সীমার বাবা শাহজাহান মিয়া মুঠোফোনে বলেন, সাইফুরের পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসায় তার সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের পর সাইফুর সীমাকে লন্ডনে নিয়ে যায়। লন্ডনে কী হয়েছে তা আমরা জানি না! সীমা এখন আমার মামাশ্বশুর শফিক মিয়ার বাসায় রয়েছে।

তিনি মেয়ে সীমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন।

এদিকে শফিক মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সীমাকে নিয়ে কোনো নিউজ না করার কথা বলে কল কেটে দেন।

Facebook Comments Box

Posted ৭:৩০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ajkersangbad24.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক
ফয়জুল আহমদ
যোগাযোগ

01712000420

fayzul.ahmed@gmail.com