অনলাইন ডেস্ক | বৃহস্পতিবার, ০৮ আগস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট | 36 বার পঠিত
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর কী কী চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী নতুন সরকারের জন্য সেই বিশ্লেষণ করেছে দ্য ইকনোমিস্ট।
গত ৫ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার হওয়ার কথা ছিল ঢাকার একটি আদালতে। একটি দুর্নীতি মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারত। তবে মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে ঘুরে গেলো তার ভাগ্যের চাকা। বিচারের মুখোমুখি হওয়ার পরিবর্তে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ও সামাজিক উদ্যোক্তা ড. ইউনূস বাংলাদেশের সেনা-সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নিযুক্ত হন। তবে অস্থিতিশীল এই সময়ে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়তে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হবে তাকে। এভাবেই ড. ইউনূসকে নিয়ে ঘটনাক্রম বর্ণনা করেছে প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকনোমিস্ট। দেশ চালাতে গিয়ে তিনি প্রধান ৩টি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন বলেও বিশ্লেষণে দাবি করেছে সাময়িকীটি।
কয়েক সপ্তাহের ছাত্র আন্দোলনের পর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। সরকার পতনের পর প্রশাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা এখন নিজ দায়িত্বে সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করছে এবং সংসদসহ লুটপাটের শিকার ভবনগুলো পরিষ্কার করছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি।
আশা কি পূরণ হবে?
বাংলাদেশে সাংবিধানিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করাটা অনেকাংশেই কঠিন হবে। এর একটি কারণ হতে পারে, শেখ হাসিনার আকস্মিক দেশত্যাগের ফলে দেশে নেতৃত্বের যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে সেটি পূরণ করা। এই শূন্যতা কে পূরণ করবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। তার আওয়ামী লীগ দল এখন জনগণের কাছে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরপরই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেত্রী খালেদা জিয়া। তবে ৭৮ বছর বয়সী এই নেত্রী বর্তমানে অসুস্থ ও শেখ হাসিনার আমলে তার দল বিএনপি একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রভাব বিস্তার করে আসছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শাসনামলে বাংলাদেশে নতুন এবং উদারপন্থি শক্তির উত্থান হয়নি। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামপন্থি দলগুলো আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তারাও এখন নেতৃত্বের এই শূন্যস্থান পূরণ করতে চাইতে পারে। তবে এই চ্যালেঞ্জটি আরও বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা, বাংলাদেশ এখন চীন, ভারত এবং পশ্চিমাদের মধ্যে একটি ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে।
তবে প্রাথমিকভাবে আশা জাগানিয়া কিছু লক্ষণ দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর সংযম দেখিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ওইদিনই সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দেন। পরের দিন ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের দাবির কাছে মাথা নত করেন তিনি।
প্রথম চ্যালেঞ্জ
দ্য ইকোনমিস্টের মতে, ৮ আগস্ট প্রত্যাশিতভাবে শপথ নেওয়ার পর ড. ইউনূসের প্রথম কাজ হবে দেশে আবার শান্তিপূর্ণ রাজনীতি ফিরিয়ে আনা। দেশের সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার চেয়ে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। জুলাই মাসে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে ছাত্ররা মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের সব ধরনের সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটার বিরোধিতা করেছিলেন। বিক্ষোভ ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল।
আন্দোলনের তোপের মুখে অবশেষে কোটা সংস্কারের পক্ষে রায় দেয় আদালত। তবে তখন অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল। ইতোমধ্যে কোটা সংস্কারের আন্দোলন বছরের পর বছর ধরে চলা শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের হতাশাকে উসকে দিয়েছিল। চলতি সপ্তাহের শুরুতে তার বাসভবনে ভাঙচুর এবং পুলিশ স্টেশন ও আওয়ামী লীগ মন্ত্রীদের বাড়িতে হামলার ঘটনাগুলো প্রতিবাদকারীদের ক্ষোভেরই প্রতিফলন। অব্যাহত এই অশান্তির ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে ৭ আগস্ট দেশবাসীকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ড. ইউনূস। দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘আপনার শান্ত থাকুন ও আপনার চারপাশের মানুষদের শান্ত থাকতে সহযোগিতা করুন।’
দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ
ড. ইউনূসের পরবর্তী কাজ হবে বাংলাদেশের রাজনীতির পুনর্গঠন করা। আর এ জন্য শুধু দ্রুত নতুন নির্বাচনের আয়োজনই যথেষ্ট নয়। তাকে আরও বেশি কিছু করতে হবে। দেশের আদালত ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাব কমাতে হবে। দীর্ঘদিন ধরেই সেগুলো অস্থিরতার উৎস হিসেবে কাজ করছে। একইসঙ্গে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে সংগঠিত হওয়ার জন্য সময় ও সুযোগ দিতে হবে। এই পদক্ষেপগুলো ছাড়া একটি নতুন নির্বাচন সহজেই ইসলামপন্থি গোষ্ঠী বা একটি পুনর্গঠিত বিএনপির পক্ষে যেতে পারে। তবে এই শক্তিগুলোও দলকেন্দ্রিতায় ভুগছে।
তৃতীয় চ্যালেঞ্জ
ড. ইউনূসের জন্য তৃতীয় বড় চ্যালেঞ্জ হলো একটি জটিল ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্র তৈরি করা। এই পরিবর্তনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রভাবিত হবে বেশি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে দেশটির একটি ঘনিষ্ঠ ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। আওয়ামী লীগকে এই অঞ্চলে মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে একটি ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি হিসেবে দেখে ভারত। গত এক দশকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় ভারত শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে বাণিজ্য, জ্বালানি ও সামরিক সম্পর্ক সম্প্রসারিত করেছে। নির্বাসনে যাওয়া ‘লৌহ মানবী’ হিসেবে পরিচিত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার কারণে শেখ হাসিনাকে সমর্থন না করা অনেক বাংলাদেশির মনে ভারত বিরোধিতা আরও বাড়বে। এছাড়া, বাংলাদেশে অবস্থান করা আনুমানিক ১০ হাজার ভারতীয় নাগরিক এবং সেই সঙ্গে ১ কোটি ৪০ লাখ হিন্দু সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় সহায়তা করার জন্য চাপের মধ্যে রয়েছে দিল্লি।
প্রকৃতপক্ষে, আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং যেকোনও উত্তরসূরি শেখ হাসিনার চেয়েও বেশি চীনের দিকে ঝুঁকতে পারেন। এমন না যে তিনি চীনের প্রতি বিরূপ ছিলেন। তার শাসনামলে চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার, দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগকারী, তৃতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা এবং সামরিক প্রযুক্তির প্রধান উৎস হয়ে ওঠে। তবুও, চীনের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল না হওয়ার জন্য ভারত ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়ে সতর্ক ছিলেন শেখ হাসিনা।
Posted ৮:০৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ আগস্ট ২০২৪
ajkersangbad24.com | Fayzul Ahmed