বুধবার ২৩শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

গোয়াইনঘাটে ভয়াবহ বন্যায় পানি বন্দি সাড়ে ২৪ হাজার পরিবারের মানুষ

গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি   |   মঙ্গলবার, ১৮ জুন ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   61 বার পঠিত

গোয়াইনঘাটে ভয়াবহ বন্যায় পানি বন্দি সাড়ে ২৪ হাজার পরিবারের মানুষ

 

গত ছয় দিনের ভারী বৃষ্টি ও ভারতের মেঘালয়ের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার গোয়াইন, সারী,পিয়াইন নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বিশ দিনের ব্যাবধানে দ্বিতীয়বারের মতো ভয়াবহ বন্যাকবলিত পানি বন্দি হয়ে পড়েছে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ২৪ হাজার ৩শত ৫০ টি পরিবারের মানুষ।এতে করে ঈদের পরের দিনই উপজেলার ৩৩১ বর্গ কিঃমিঃএলাকা এবং উপজেলার ২০৬ টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে । সবচেয়ে বিপদে আছে উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও হাওরাঞ্চলের পানি বন্দি লক্ষাধিক মানুষ । ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় গোয়াইনঘাট উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে বলে তথ্য সূত্রে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) বিকাল ৩ টায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গোয়াইন, সারী,পিয়াইন নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।

গোয়াইনের পানি ১০.৮২ মিটার সারী নদীর পানি ১২.৩৫ মিটার পিয়াইন নদীর সীমার ১৩.০০ মিটার, সারী নদীর পানি বিপদ সীমার ১২.৩৫ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।এছাড়াও মেঘদূত এপস – আইএমডি তথ্য অনুযায়ী গোয়াইনঘাট সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যর” ওয়েষ্ট জৈন্তা হিলস”ও ইষ্ট খাসি হিলস”জেলায় আগামী ১৯জুন ৩২৩ মি.মি ও ২০জুন ৭২৫ মি.মি বৃষ্টি পাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

গোয়াইনঘাট, সারী, পিয়াইন নদীর পানি বৃদ্ধি ও বৈরীআবহাওয়া অব্যাহত থাকায় উপজেলা সদর হতে জেলা সদরে যাতায়াতের ৪ টি রাস্তার বিভিন্ন স্থানে পানিতে তলিয়ে গেছে।সরী টু গোয়াইনঘাট রাধানগর জাফলং সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।এদিকে সালুটিকর গোয়াইনঘাটের প্রধান সড়কটি ও পানিতে ডুবে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে যানচলাচল বন্ধ হয়ে সিলেট শহরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৩ টি ইউনিয়নে নিয়োজিত ১৩ জন সরকারি ট্যাগ অফিসার সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সমন্বয় ও তদারকি করছেন। জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম এবং ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নে ৪৭ টি উদ্ধারকারী নৌকা (রেসকিউ বোট)পানি বন্দিদের উদ্ধারের জন্য ও স্থানীয় নৌকা সমুহু ব্যবহার হচ্ছে ।

বন্যায় গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৩১৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়ে ২৪ হাজার ৩ শত ৫০ টি পরিবার পানি বন্দি আছে। ১৫০০ হেক্টর কৃষি জমি পানিতে নিমজ্জিত আছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁচাপাকা রাস্তা ব্রিজ ও কালভার্ট।পানি বন্দি হয়ে ৫৬ টি আশ্রয় কেন্দ্রর মধ্যে ২২ টি কেন্দ্রে ১৪৪০ জন নারী পুরুষ শিশু সহ ৫৩০ টি গবাদিপশু আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও বন্যা দু্র্গত বিপুল সংখ্যক মানুষ নিকটস্থ আত্মীয়- স্বজনের নিরাপদ উঁচু স্থাপনাতেও আশ্রয় নিয়েছে।

গোয়াইনঘাটে বন্যা দুর্গত মানুষের চিকিৎসার জন্য ১০ টি মেডিকেল টিম ও পানিবন্দিদের উদ্ধাররের জন্য নৌকা ও প্রতিটি ইউনিয়নের স্থানীয় নৌকা সমূহ ব্যবহার হচ্ছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শীর্ষেন্দু পুরকায়স্থ বলেন,গত বৃহস্পতিবার থেকে ভারী বৃষ্টি ও ভারতের মেঘালয়ের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ইতিমধ্যে গোয়াইনঘাটে ফের বন্যায় ১৩ টি ইউনিয়নের ২২৩ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নে ৫৬ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে।নৌকা যোগে পানি বন্দিদের উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হচ্ছে।মেঘদূত এপস- আইএমডি তথ্য অনুযায়ী ভারতের মেঘালয় “ওয়েষ্ট জৈন্তা হিলস” ও ‘ইষ্ট খাসি হিলস ” জেলায় আগামী ১৯ জুন ৩২৩ মি.মি.ও ২০জুন ৭২৫ মি.মি বৃষ্টি পাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে। কোথাও সহযোগিতার প্রয়োজন হলে চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াব।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তৌহিদুল ইসলাম বলেন , গত ছয় দিনের ভারী বর্ষনে ও ভারতের মেঘালয় থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘ হয়েছে। উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও হাওরাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে ৩৩১ বর্গ কিলোমিটার এরিয়া ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। বন্যার্তদের আশ্রয়ের জন্য উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নে ৫৬ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে।সেখানে ১৩ জন ট্যাগ অফিসার ও ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সমন্বয়য়ে বন্যা দুর্গতদের উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে ।জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন ৪৭ টি উদ্ধারকারী নৌকা ও স্থানীয় নৌকা সমূহ ব্যবহার করা হচ্ছে।তাছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের শুকনো খাবারের পাশাপাশি রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও মেঘদূত এপস – আইএমডি তথ্য অনুযায়ী ভারতের মেঘালয় রাজ্যর” ওয়েষ্ট জৈন্তা হিলস “ও ইষ্ট খাসি হিলস ” জেলায় আগামী ১৯ জুন ৩২৩ মি.মি ও ২০ জুন ৭২৫ মি.মি বৃষ্টি পাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে এ ব্যপারে জনসাধারণ কে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, সীমান্তবর্তী এ উপজেলার গত ১৪ জুন সকাল ৬ টা থেকে ১৮ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪ দিনে ১৪৭৫ মি.মি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়াও আগামী ১৯ ও ২০ জুন ২ দিনে ১০৪৮ মি.মি বৃষিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বন্যার পানি বাড়ছে এমন খবর পাওয়া গেছে অতিবৃষ্টি ও বৈরীআবহাওয়া অব্যাহত রয়েছে।

Facebook Comments Box

Posted ৮:২১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৮ জুন ২০২৪

ajkersangbad24.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক
ফয়জুল আহমদ
যোগাযোগ

01712000420

fayzul.ahmed@gmail.com