মঙ্গলবার ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

সুনামগঞ্জ-৩ আসনে নৌকা জয়ের কথা মানুষের মুখে মুখে, পিছিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীরা

জগন্নাথপুর প্রতিনিধি   |   শনিবার, ০৬ জানুয়ারি ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   175 বার পঠিত

সুনামগঞ্জ-৩ আসনে নৌকা জয়ের কথা মানুষের মুখে মুখে, পিছিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীরা

সুনামগঞ্জ-৩ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসলেও নির্বাচনি মাঠে নিরুত্তাপ বিরাজ করছে। তবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী, সমর্থকরা শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জে ব্যাপক প্রচারে উৎসব ছড়ানোর পাশাপাশি নির্বাচনি উত্তাপ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ নৌকার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে। দলের হেভিওয়েট প্রার্থী টানা তিনবারের নির্বাচিত বর্তমান সংসদ সদস্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবার ‘অপ্রতিরোধ্য প্রার্থী’ হিসেবে জয়ের দ্বারপ্রান্তে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। নৌকার সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা অনেকটা পিছিয়ে আছেন এমন আভাস মাঠে পাওয়া যাচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ মান্নানের তিনবারের প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী ‘তিনিই’ এবার জয়ী হবেন এমন দাবি করে প্রচার করছেন মাঠে।
স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৩ আসনে এবার সংসদ সদস্য পদে চারজন প্রার্থী প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করছেন। মান্নান, পাশা ছাড়াও অপর দুই প্রার্থী হলেন জাতীয় পাটির যুক্তরাজ্য প্রবাসি তৌফিক আলী মিনার (লাঙল) ও বাংলাদেশ জাতীয় পাটির তালুকদার মকবুল হোসন (কাঠাঁল)। চার প্রার্থীর মধ্যে তিন প্রার্থী প্রচারণায় থাকলেও মাঠে নেই মকবুল হোসেন।
এ আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করলে তাঁর এ শূন্য আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এনির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় জমিয়তে উলামায়ের নেতা অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক যুগ্ম সচিব এম এ মান্নানকে সামান্য ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ নির্বাচনের পর এম এ মান্নান আওয়ামী লীগের যোগদান করে ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এমএ মান্নান আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হন। এসময় তিনি সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর পরবর্তীতে তিনি পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও দল চতুর্থবারের মতো এম এ মান্নানকে মনোনয়ন প্রদান করে।
ক্লিন ইমেজের অধিকারী এম এ মান্নান গত ১৫ বছরে তাঁর দায়িত্বকালিন সময়ে জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন। বেশ কয়েকটি মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য তিনি সবমহলে প্রশংসিত হন। স্বজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত এম এ মান্নান তাঁর নির্বাচনি এলাকা ছাড়াও সুনামগঞ্জ জেলাজুড়ে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চালিয়ে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত নির্বাচনি এলাকার লোকজনের কাছে সুনাম অর্জন করেন।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিন্দ্বন্দি¦তা করছেন। তবে এ আসনে নিজ দলের কোন বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি তাঁকে। বরং দীর্ঘ র্দিন ধরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদের ছেলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডনের সঙ্গে দলীয় কোন্দল থাকলেও এবার মান্নান ও ডন বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ। গত ৭ ডিসেম্বর আজিজুস সামাদ ডন তার স্ত্রী কে নিয়ে এম এ মান্নান বাসায় গিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। গত ৪ জানুয়ারি জগন্নাথপুর পৌর পয়েন্টে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি শেষ সভায় মান্নানের সমর্থনে বক্তব্যে তিনি নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করেন।
অপর দিকে সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট শাহীনুর পাশা চৌধুরী এবার তাঁর দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় তিনি তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করে তৃণমূল বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে সোনালি আঁশ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী করছেন। এরআগে তিনি ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোটের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আওয়ামী লীগের দলীয় এম এ মান্নানের নিকট বিপুল ভোটে পরাজিত হন। গত নির্বাচনে তিনি ধানের শীষ ভোট পান ৫১ হাজার ৪৮টি। আর এম এ মান্নান নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছিলেন ১ লাখ ২০ হাজার ৬শ ৪ ভোট। এ নির্বাচনে বিএনপি ও তার শরীক দল অংশ না নেওয়ায় শাহীনুর পাশা এবার ভোটে বেকায় আছেন বলে ভোটারা মনে করেন। যদিও নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ তেমন না থাকলেও এখানকার ভোটাদের মুখে মুখে মান্নানের নৌকা জয়ের কথা শুনা যাচ্ছে। স্থানীয় এলাকাবাসি মনে করেন উন্নয়নের জন্য মান্নানের বিকল্প নেই। এছাড়া মান্নানের প্রতিপক্ষ কোন প্রতিন্দ্বন্দ্বি প্রার্থী মাঠে শক্তিশালী অবস্থান না থাকায় ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের নৌকা যেন জয়ের বন্দরে অনেক দূরে পৌঁছে আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভোটার জানান, ব্যাপক উন্নয়নের জন্য এম এ মান্নানের আমাদের কাছে জনপ্রিয়। ভোটে মানুষের আগ্রহ কিছুটা কম থাকলেও মান্নানের নৌকা জয়ের কথা মানুষের মুখে মুখে। যদিও আসনটিতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জমিয়ত ছেড়ে তৃণমূলের ব্যানারে আসায় শাহিনুর পাশা বিতর্কিত অবস্থানের কারণে পিছিয়ে আছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু বলেন, একজন সৎ ব্যক্তি হিসেবে এম এ মান্নানের সবার কাছে পরিচিত। তিনি তাঁর নির্বাচনি এলাকায়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সার্বিক উন্নয়ন অভুতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন। মানুষ ধারাবারিক উন্নয়নের জন্য নৌকাকে বিজয়ী করবে।
তবে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট শাহীনুর পাশা চৌধুরীর দাবি করেছেন, তিনিই জয়ী হবেন এবারের নির্বাচনে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে। একারণে তিনি বিজয়ী হবেন বলে জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, মানুষ উন্নয়ন চায়। আর উন্নয়নের জন্য নৌকাকে মানুষ ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে।
জগন্নাথপুর নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানান, মোট ভোটার ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭২৮ জন, মহিলা ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ৯২১ জন ও হিজরা ভোটার ৪ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ১৪৫টি।

Facebook Comments Box

Posted ১০:৪০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৬ জানুয়ারি ২০২৪

ajkersangbad24.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক
ফয়জুল আহমদ
যোগাযোগ

01712000420

fayzul.ahmed@gmail.com