মঙ্গলবার ২২শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

আগাছা, কাঁচা ক্যাকটাস খাচ্ছে গাজাবাসী, না খেয়ে শিশুরা

অনলাইন ডেস্ক   |   শনিবার, ০২ মার্চ ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   54 বার পঠিত

আগাছা, কাঁচা ক্যাকটাস খাচ্ছে গাজাবাসী, না খেয়ে শিশুরা

তীব্র খাদ্য সংকটে পৌঁছে গেছে অবরুদ্ধ গাজা। ইসরাইলের নৃশংস তাণ্ডবে অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে ছোট-বড় বেকারিগুলো। বাইরে থেকে ত্রাণের ব্যবস্থাও আটকে রেখেছে ইসরাইল। খাবারের সন্ধানে বের হলেও ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা নেই। ইসরাইলের গুলিতে মৃত্যুর ভয় সেখানেও- জীবনের নিরাপত্তা নেই কোনোখানেই।

মৃত্যুপুরী গাজার চার দিকে যেন যমদূতের মতো ওত পেতে আছে ইসরাইলের হামলা। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় চলমান এই মৃত্যু-আতঙ্কের মাঝেই থাবা বসাচ্ছে নতুন দানব ‘দুর্ভিক্ষ’। দুবেলা দুমুঠো খাবারের সে লড়াই এখন ইসরাইলের বুলেট-বোমার চেয়েও ভয়ংকর! মৃত্যুযন্ত্রণার ছটফটানির চেয়েও আরও করুন! আলজাজিরা, রয়টার্স।

গাজায় এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও মিলছে না একবেলার খাবার। দু-একটি বেকারি অবশিষ্ট থাকলেও দাম আকাশছোঁয়া। অথচ সর্বনিম্ন মূল্যেও কেনার সামর্থ্য নেই অধিকাংশ মানুষের। নবজাতক থেকে শুরু করে ছোট বড় সবাই ক্ষুধার জ্বালায় কাতর। একবেলা পেট ভরাতে সামনে যে যা পাচ্ছে তাই খাচ্ছে। ঘোড়ার মাংস, পচা ভুট্টা, আগাছা এমনকি কাঁচা ক্যাকটাস খেয়েও দিন পার করছে কেউ কেউ।

পরিস্থিতি এতই করুণ যে, খাবারের অভাবে শুকিয়ে গেছে মায়ের বুকের দুধ। বাধ্য হয়ে নবজাতকের মুখে ফিডারের আদলে কাপড়ে মোড়োনো খেজুর গুঁজে দিচ্ছেন নিরুপায়-অসহায় মায়েরা।

গাজায় ইসরাইল আগ্রাসনের প্রায় পাঁচ মাস হয়ে যাচ্ছে। দিন যাচ্ছে আর প্রকট হচ্ছে খাদ্যের চাহিদা। মজুত খাবারও শেষ অনেক আগেই। এখন ঝুঁকছে বিকল্প পথে। হাতের কাছে যা পাচ্ছে তা-ই গিলে খাওয়ার দশা! হোক সে অখাদ্য কিংবা পশু খাদ্য! বাঁচতে হবে- এটাই এখন শেষ কথা।

ঘরবাড়ি হারিয়ে দেইর-ই-আল বালাহ শহরের তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া মারওয়ান আল-আওয়াদেয়া এবং তার পরিবার এই দলেরই এক জলজ্যান্ত উদাহরণ। ক্ষুধার জ্বালায় কাঁটাযুক্ত নাশপাতি খাচ্ছে তারা। এটি সাধারণত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে প্রাণীদের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এখন সেই প্রাণীখাদ্যই তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন।

মারওয়ান আল-আওয়াদেয়া বলেন, ‘আজ, আমরা (এখনো) ক্যাকটাস খুঁজে পাচ্ছি। এক সপ্তাহের মধ্যে এই ক্যাকটাসগুলোও আর পাওয়া যাবে না। আমরা কিছুতেই বাঁচব না। আমরা মারা যাব। এই মাসে আমার প্রায় ৩০ কিলোগ্রাম ওজন কমে গেছে। কেন? কারণ আমাদের খাবার নেই। উত্তর গাজা উপত্যকায় আমাদের আর কিছু নেই। সব শেষ। আর কিছুই বাকি নেই।’

এমন অবস্থা শুধু আওয়াদেয়া পরিবারেরই নয়। গাজাজুড়েই এই চিত্র। ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে এমন নানান ধরনের অখাদ্য খাচ্ছেন অসহায় মানুষগুলো। আওয়াদেয়া পরিবারের একজন বলেন, ‘ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মধ্যে আছি আমরা। খাওয়ার কিছুই নেই। কিছু দিন আগেও মালো নামের এক আগাছা খেয়েছি। কিন্তু এখন তাও নেই। বাধ্য হয়ে কাঁটাযুক্ত ক্যাকটাসই খাচ্ছি। ছোট শিশুরাও খাচ্ছে বিস্বাদ এই উদ্ভিদ। অথচ এই বয়সে তাদের দুধ, ডিম, মাংসের মতো পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন।’

৭ অক্টোবর ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই দুর্ভিক্ষ চলছে গাজায়। তবে গত এক মাস একেবারেই খাদ্যের জোগান নেই অঞ্চলটিতে। এমন পরিস্থিতিতে গাজায় মানবিক সংকট আরও বাড়বে বলে বারবার সতর্কবার্তা দিচ্ছে জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনসহ খোদ নিরাপত্তা পরিষদও।

তারা আরও জানিয়েছে, বর্তমানে গাজার প্রায় পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ ক্ষুধার অভাবে রয়েছে। খাবারের অভাবে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি।

গত বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) খাবারের জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করা দেইর-ই-আল বালাহ শহরের আরও এক পরিবারের করুণ কাহিনী ফুটে উঠেছে গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে। একই পরিবারের তিন ভাই সিরাজ শেহাদা (৮), ইসমাইল (৯) এবং সাদ (১১)। বাস্তুচ্যুত হয়ে নিজ বাড়ি থেকে দক্ষিণে পালিয়ে এসেছে তারা। ময়দার পরিবর্তে পশুখাদ্য থেকে তৈরি তেতো রুটিও খাচ্ছে এই তিন শিশু। খাবারের অভাবেই খালার সঙ্গে গোপনে পালিয়ে এসেছিল।

সিরাজ শেহাদার ভাষ্য, ‘আমরা যখন গাজা শহরে ছিলাম, কিছুই খেতাম না। আমরা প্রতি দুদিন পরপর খাবার পেতাম। আমরা পাখি এবং গাধার খাওয়ার জন্য শস্য এবং বীজ থেকে তৈরি রুটি খেয়ে বেঁচে ছিলাম।’
তাদের গর্ভবতী খালা ইমান শাহাদা জানান, ‘ইসরাইলের হামলায় আমার স্বামীকে হারিয়েছি। আমি অন্তঃসত্ত্বা অথচ প্রয়োজনীয় খাবার পাচ্ছি না। আমি ক্লান্ত এবং মাথা ঘুরছে। এক কেজি আলু কেনারও সামর্থ্যও নেই আমার। আমি জানি না কীভাবে এই তিন বাচ্চার খাবার আমি জোগাড় করব। আমি গর্ভবতী এবং যে কোনো মুহূর্তে সন্তানের জন্ম হতে পারে।’
ওয়ার্দা মাত্তার নামের আরেক বাস্তুচ্যুত মা তার দুই মাসের শিশুকে নিয়ে একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। না খেয়ে খেয়ে বুকের দুধও শুকিয়ে গেছে। দুধের অভাবে নাড়ীছেঁড়া ধনকে কাপড়ে মোড়ানো একটি খেজুর চুষে খাওয়াচ্ছেন বারবার।
মাত্তার বলেন, আমার নবজাতক ছেলের দুধ খাওয়ার কথা, সেটা প্রাকৃতিক দুধ বা ফর্মুলা দুধই হোক না কেন। কিন্তু আমি তাকে দুধ দিতে পারিনি, কারণ গাজায় দুধ নেই। তাই আমি আমার ছেলেকে শান্ত রাখতে খেজুর বেছে নিয়েছি।
পরিবারের জন্য প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পানি সংগ্রহ করেন ১১ বছর বয়সি কারেম সামরা। তিনি বলেন, ‘কখনো কখনো আমি যখন পানি নিয়ে ফিরে যাই, তখন অনেক সময় সেগুলো ভারী হওয়ার কারণে আমি পড়ে যাই। আমি কান্না করি, কারণ আমি জানি সাহায্য করার মতো কেউ নেই এবং আমি পানি না নিয়ে গেলে আমার পরিবারের কাছে পান করার মতো কিছু থাকবে না।’

Facebook Comments Box

Posted ১২:২৭ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০২ মার্চ ২০২৪

ajkersangbad24.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক
ফয়জুল আহমদ
যোগাযোগ

01712000420

fayzul.ahmed@gmail.com