শুক্রবার ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

ইসরাইলের পক্ষে ‘অপসাংবাদিকতা’ করছে সিএনএন

অনলাইন ডেস্ক   |   বুধবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   53 বার পঠিত

ইসরাইলের পক্ষে ‘অপসাংবাদিকতা’ করছে সিএনএন

ছবি : সংগৃহীত

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন ইসরাইলের পক্ষে ‘অপ-সাংবাদিকতা’ করছে; খোদ ওই নেটওয়ার্কের কর্মীরাই এমন অভিযোগ করছে। সিএনএনের ভেতরের লোকজনই বলছেন, গাজায় চলমান সংঘাত কাভার করতে গিয়ে ইসরাইলের দাবিকেই বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আকারে হাজির করা হচ্ছে। বিপরীতে ফিলিস্তিনিদের প্রশ্নকে ভয়াবহভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তবে সিএনএনের একজন মুখপাত্র তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

সিএনএনের বিভিন্ন নিউজরুমের ছয় কর্মীর বক্তব্য, এক ডজনেরও বেশি অভ্যন্তরীণ মেমো এবং ই-মেইল হাতে পেয়েছে দ্য গার্ডিয়ান। এগুলোর ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটলান্টায় সিএনএনের সদর দফতর থেকে দিনের সংবাদের ওপর একাধিক নির্দেশনা আসে। এই কঠোর নির্দেশনাগুলো সংবাদ কাভারেজের ওপর প্রভাব ফেলে।

যুক্তরাষ্ট্র ও বিভিন্ন দেশে সিএনএন বার্তা কক্ষের কর্মীদের অভিযোগ, ওপর মহলের চাপিয়ে দেওয়া নির্দেশ ও প্রতিবেদনের অনুমোদন প্রক্রিয়ার কারণে ৭ অক্টোবর হামাসের হত্যাযজ্ঞ ও জবাবে গাজায় ইসরাইলি হামলা নিয়ে তীব্র পক্ষপাতমূলক সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে।

সিএনএনের এক কর্মী বলেছেন, ‘যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই অধিকাংশ খবর, প্রাথমিকভাবে তা যতই নির্ভুল হোক না কেন; দিনশেষে তা পক্ষপাতদুষ্ট হয়েছে। এর কারণ হলো- আমাদের নেটওয়ার্কে ইসরাইলের প্রতি একটি পদ্ধতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পক্ষপাতিত্ব রয়েছে।’ তার মতে, ‘চূড়ান্ত অর্থে সিএনএনের ইসরাইল-গাজা কাভারেজ অপসাংবাদিকতার শামিল’

সিএনএনের সদর দফতর থেকে আসা নির্দেশনার মধ্যে হামাসকে উদ্ধৃত করা এবং ফিলিস্তিনিদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রতিবেদন করার ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যদিও ইসরাইল সরকারের বিবৃতিগুলোকে ঠিকই যথাযথভাবে প্রকাশ করার জন্য তাগিদ দেওয়া হয়। এর মধ্যে আবার গাজা সংঘাত নিয়ে করা প্রতিটি প্রতিবেদন সম্প্রচার বা প্রকাশের আগে জেরুজালেম ব্যুরোর অনুমোদন নিতে হয়।

সিএনএনের সাংবাদিকরা বলছেন, ইসরাইলের প্রতি এই পক্ষপাতমূলক অবস্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছেন তাদের নতুন এডিটর-ইন-চিফ এবং সিইও মার্ক থম্পসন। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার দুই দিন পর তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। নিজেদের কাভারেজে বাইরের হস্তক্ষেপ ঠেকানোর বিষয়ে থম্পসনের সদিচ্ছা নিয়ে সন্দিহান কর্মীদের একাংশ। কেননা, বিবিসির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তার বিরুদ্ধে ইসরাইলি সরকারের চাপের কাছে বিভিন্ন সময় মাথা নত করার অভিযোগ ছিল । ২০০৫ সালে ইসরাইল সরকারের কথায় জেরুজালেমে বিবিসির এক রিপোর্টারকে তার পদ থেকে অপসারণ করেছিলেন থম্পসন।

সিএনএনে কর্মরতরা বলছেন, এ কারণেই যুদ্ধের প্রথম সপ্তাহগুলোতে, হামাসের হামলার শিকার হিসেবে ইসরাইলিদের কষ্ট ও দুর্ভোগের কথাই তাদের প্রতিবেদনে বেশি করে স্থান পেয়েছে। তখন সংবাদমাধ্যমটির প্রতিটি প্রতিবেদনে যুদ্ধে ইসরাইলি আখ্যানের (ন্যারেটিভ) ওপর মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। গাজায় ইসরাইলি সেনাদের চালানো ধ্বংসযজ্ঞ এবং তাদের হাতে ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের মৃত্যুর মাত্রা বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো নেটওয়ার্কটির কাভারেজে তেমন কোনো গুরুত্ব পায়নি।

সিএনএনের কয়েকজন বলেছেন, সাংবাদিকদের মধ্যে ‘একাধিক বিরোধ ও ভিন্নমত দেখা দিয়েছে। কিছু মানুষ এখান থেকে বের হতে চাইছে। ভিন্ন ব্যুরোর আরেক সাংবাদিক দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, তারাও এমন কিছুই ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন।

সিএনএনের ভেতরকার লোকজনরা আরও বলেছেন, বৈঠকে সিএনএনের নীতির সঙ্গে একমত নন এমন সিনিয়র কর্মীরা আদেশ প্রদানকারী নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, এমন বিধিনিষেধমূলক নির্দেশনা থাকলে কীভাবে একটি প্রতিবেদনকে কার্যকরভাবে তুলে ধরা সম্ভব? তারা আরও বলেছেন, ‘সম্প্রচারের জন্য গাজা থেকে আরও প্রতিবেদনের জন্য চাপ দিচ্ছেন অনেকেই। তবে এই প্রতিবেদনগুলো যখন জেরুজালেম হয়ে টিভি বা হোমপেজে প্রচার হয়, তখন সেগুলো আর আগের মতো থাকে না। প্রচারিত সেসব কাভারেজে অশুদ্ধ ভাষার ব্যবহার থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর প্রতি বিশেষ অবহেলা করা হয়। ফলে অপরাধ যত গুরুতরই হোক না কেন, এরকম প্রতিটি প্রতিবেদন ইসরাইলকে দায়মুক্তি দিচ্ছে।’

সিএনএন কর্মীরা আরও জানিয়েছেন, সংঘাতের খবর সংগ্রহ ও মধ্যপ্রাচ্যে কাজের অভিজ্ঞতা থাকা কয়েকজন সাংবাদিক এবার প্রতিবেদন পাঠানো এড়িয়ে যাচ্ছেন। কারণ তারা মনে করছেন, স্বাধীনভাবে পুরো বিষয় তুলে ধরতে পারবেন না। তবে অনেকেই ধারণা করছেন, জ্যেষ্ঠ সম্পাদকরা বুঝি তাদের সুযোগ দিচ্ছিলেন না। সিএনএনের এক অভ্যন্তরীণ কর্মী বলেছেন, ‘এটা স্পষ্ট যে যোগ্যরা নয়, বরং অযোগ্যরাই এই যুদ্ধের খবর পাঠাচ্ছেন।’

চলমান সংঘাত নিয়ে সিএনএনের কাভারেজকে ‘দুর্দান্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন থম্পসন। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার দুদিন পর সম্পাদকদের সঙ্গে তার প্রথম সভায় এমন মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবরের শেষ দিকে গাজায় ইসরাইলি অভিযানে ফিলিস্তিনিদের নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকলে এবং স্থল অভিযানের প্রস্তুতির সময় আবার নতুন নির্দেশ আসে কর্মীদের কাছে। সে সময় স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়, এই বিষয়ক প্রতিবেদনগুলোতে দর্শকদের বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে যে হামাসের হামলা ও বেসামরিকদের জিম্মি করার কারণেই এই মানবিক পরিণতি। সিএনএন কর্মীরা বলছেন, এই নির্দেশনা তাদের প্রতিবেদনগুলোর একটা কাঠামো দাঁড় করিয়ে দেয়। আর এতে ইসরাইলি কর্মকাণ্ডকে ন্যায্যতা দেওয়া হয়েছে হামাসের হত্যাযজ্ঞের কথা তুলে ধরে। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য দৃষ্টিভঙ্গি বা ইতিহাসকে আমলে নেওয়া হয়নি। ইসরাইলিরা যা-ই করুক না কেন, দায় শুধু হামাসের।

নভেম্বরের শুরুতে আরেকটি নির্দেশনায় হামাসের বক্তব্য প্রচারে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। দ্য গার্ডিয়ানের হাতে থাকা সেই নথিতে বলা হয়, হামাসের বক্তব্য উসকানিমূলক বাগাড়ম্বর ও প্রোপাগান্ডা। এগুলোর সংবাদমূল্য নেই। তাদের বক্তব্য প্রচারের মঞ্চ দেওয়া উচিত না। তবে সিএনএন কর্মীরা উল্লেখ করেছেন, বিপরীতে ইসরাইলি কর্মকর্তা ও মার্কিন সমর্থকদের উসকানিমূলক বক্তব্য ও প্রোপাগান্ডা প্রায় সময় সাক্ষাৎকারে চ্যালেঞ্জ করা ছাড়াই প্রচার করা হয়েছে।

সিএনএন সূত্র স্বীকার করেছে, ৭ অক্টোবরের হামলার পর কোনো হামাস নেতার সাক্ষাৎকার সংবাদমাধ্যমটিতে প্রচার হয়নি। এমন সাক্ষাৎকার প্রচারে নির্দিষ্টভাবে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু বার্তা কক্ষ ও রিপোর্টারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, উচ্চতর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কোনো অবস্থাতেই হামাসের রেকর্ডকৃত ভিডিও রাখা যাবে না।

সিএনএনের একজন মুখপাত্র পক্ষপাতমূলক কাভারেজের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হামাসের হামলার বিপরীতে ইসরাইলি জবাবের পদ্ধতি নিয়ে আমাদের কাভারেজে (প্রতিবেদন, বড় ধরনের অনুসন্ধান ও সাক্ষাৎকার) প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

Facebook Comments Box

Posted ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ajkersangbad24.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক
ফয়জুল আহমদ
যোগাযোগ

01712000420

fayzul.ahmed@gmail.com