ইয়াসিন আরাফাত ত্বোহা | রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট | 88 বার পঠিত
মহান আল্লাহর অন্যসব সৃষ্টির মধ্যে মানুষের অনন্যতা মূলত নীতি-নৈতিকতায়। পশু-পাখির মতো প্রাকৃতিক প্রয়োজন মানুষেরও আছে, মানুষকে সেসব প্রয়োজন পূরণ করতে হয় এবং এটা আল্লাহরই নির্দেশ। তবে মানুষের জন্য মনুষ্যত্ব ও নীতি-নৈতিকতা অনিবার্য বিষয়। কারণ এটা না থাকলে মানুষ আর পশুর মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্যই থাকে না। মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করেছে শিক্ষা ও নৈতিকতা। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ নিজেকে ধীরে ধীরে শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়। শিক্ষা মানুষের বিবেক জাগ্রত রাখে। চর্চা বা অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষ ওই জ্ঞান ও বিবেকের জ্যোতিতে নিজেও আলোকিত হয়, সমাজকেও আলোকিত করে। কোরআনে এসেছে, ‘তিনি যাকে ইচ্ছা বিশেষ জ্ঞান দান করেন। আর যাকে বিশেষ জ্ঞান দান করা হয়, সে প্রভূত কল্যাণকর বস্তু প্রাপ্ত হয়। উপদেশ তারাই গ্রহণ করে, যারা জ্ঞানবান’ (সুরা বাকারা : ২৬৯)। সুস্থ বিবেক মানুষের সৌন্দর্যের প্রতীক। সুস্থ বিবেক বিকাশে নৈতিক শিক্ষার বিকল্প নেই। সম্মান ও মর্যাদার সমকক্ষ কোনো কিছুর তুলনা হয় না। আর এটা প্রতিষ্ঠিত হয় সঠিক মূল্যবোধ, বিবেক-বিবেচনাবোধ ও নৈতিক পবিত্রতা জাগ্রত রাখার মাধ্যমে।
একজন শিক্ষা অর্জনকারী ব্যক্তি আলোকিত প্রদীপের মতো এবং একজন বিদ্যা বর্জনকারী ব্যক্তি আঁধারের সমতুল্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলুন, দৃষ্টিহীন ও দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি কি সমান হতে পারে? অথবা, অন্ধকার ও আলো কি কখনো সমান হতে পারে’ (সুরা রায়াদ : ১৬)? অন্যত্র বলেন, ‘হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিগণ! তোমরা গবেষণা ও শিক্ষা গ্রহণ কর’ (সুরা হাশর : ২)। বিশেষায়িত শিক্ষা অর্জনের প্রতি নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘আর সমস্ত মুমিনের অভিযানে বের হওয়া সঙ্গত নয়। তাই তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হয় না, যাতে দ্বীনের জ্ঞান লাভ করে এবং সংবাদ দান করে স্বজাতিকে, যখন তারা তাদের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে, যেন তারা বাঁচতে পারে’ (সুরা তওবা : ১২২)। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকেই অর্জন করতে হয় নৈতিক শিক্ষা। আর ইসলাম ধর্ম আগাগোড়াই নৈতিক শিক্ষার বুনিয়াদের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
শিক্ষা ব্যবস্থার মান জ্যামিতিক হারে নিম্নমুখী, যদিও পাসের হার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাসের হার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হলো পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস। ফটোকপির দোকানেও মিলছে সরকারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। আসলে এটা নৈতিক শিক্ষা ও বোধের অভাবই প্রকট হয়ে ধরা দিচ্ছে। নৈতিক শিক্ষার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি কখনো অনৈতিক কাজ তথা অসদুপায় অবলম্বন করতে পারে না। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা অনেককেই কাগজে-কলমে, হিসাব-নিকাশে শিক্ষিত করলেও অসদুপায় অবলম্বনের মতো ঘৃণ্য অনৈতিক কাজ থেকে বিরত রাখতে পারেনি। তাহলে যেখানে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলেই অসদুপায় অবলম্বন করে, সেখানে তাদের থেকে আর জাতির উন্নতি কতটুকুই আশা করা যায়!
নৈতিক শিক্ষা ব্যতীত কোনো ব্যক্তি বা জাতি উৎকর্ষ সাধন করতে পারে না। তাই বলা হয়, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু দেখা যায় যত না অপকর্ম করছে মূর্খরা, তার চেয়েও বেশি অপকর্ম করছে শিক্ষিতরা। ব্যাংক ডাকাতি, রিজার্ভ চুরি, কয়লা নিঃশেষ হওয়া, অ্যাকাউন্ট হ্যাক, শেয়ারবাজার লুট, রডের বদলে বাঁশ, প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ ঘুষ ও দুর্নীতির মতো কাজগুলো শিক্ষার অক্ষর মুখস্থ করা অনৈতিক লোকগুলোই করছে। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড আর সেই শিক্ষাটা বস্তুবাদী নয় বরং নৈতিক শিক্ষা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।’ হজরত আলী (রা.) বলেন, এর ব্যাখ্যা হলো, ধর্মীয় জ্ঞানের মাধ্যমে পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর। কারণ, হারাম কাজ করলে জাহান্নামে যেতে হবে। সুতরাং কোনটি হারাম, কোনটি নিষিদ্ধ সে বিষয়ে জ্ঞান থাকলে হারামে লিপ্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই।
নৈতিকতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুতরাং সামাজিক অনাচার-পাপাচার রোধকল্পে সমাজপতিদের দায়িত্ব অপরিসীম। সুস্থ, চরিত্রবান ও আদর্শ সমাজ গড়ে তোলার জন্য সব ধরনের অপরাধ নির্মূল করা ছাড়া উপায় নেই। এসব দায়িত্ব পালনে আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, কর্মতৎপরতা ও সৎসাহস প্রদর্শন করা একান্ত প্রয়োজন।
ব্যক্তিগত থেকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়, সর্বত্র নৈতিক শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই সুন্দর, সফল, কল্যাণকর ও সুখী সমাজ গঠন করা সম্ভব। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ ও তা প্রসারে কার্যকর ভূমিকা পালনের তাওফিক দান করুন।
Posted ৬:৩৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩
ajkersangbad24.com | Fayzul Ahmed