অনলাইন ডেস্ক | মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট | 73 বার পঠিত
# রফিক বাহিনীর প্রধানসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
# সত্যতা পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে: রূপগঞ্জ থানার ওসি
পুর্ব শত্রুতার জের ধরে রূপগঞ্জ উপজেলার নাওড়া গ্রামে রফিক বাহিনীর হামলায় গুলিবিদ্ধ তাজেল ইসলাম মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ভয়ংকর রফিক বাহিনীর তাণ্ডবে চোখে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
এ ঘটনায় আহত ১৩ জনের ৫ জন এখনও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগীরা রূপগঞ্জ থানায় মামলা করতে গেলেও মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা নেওয়া হয়নি। ঘটনার সত্যতা পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র সাহা। অভিযোগ তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জানা যায়, সোমবার দুপুরে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ওরফে আন্ডা রফিক ও তার ভাই মিজানুর রহমান ওরফে কুত্তা মিজানের উপস্থিতিতে ৫০ থেকে ৬০ জন সন্ত্রাসী নাওড়া গ্রামের নিরীহ বাসিন্দাদের ওপর বর্বর হামলা চালায়। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ৮ জনসহ আহত হয় ১৩ জন। এর মধ্যে পাঁচজন বর্তমানে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে তাদের পরিবার। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সন্ত্রাসীদের ভয়ে এলাকাছাড়া হয়েছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, তাজেল ইসলাম নাওড়া গ্রামের মোক্তার হোসেনের ছেলে। সোমবার দুপুরে সন্ত্রাসীরা তার বাড়িতে হামলা শুরু করে। আশপাশের লোকজন তাকে রক্ষা করতে এলে সন্ত্রাসীরা ব্যাপকভাবে গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তাজেল। এসময় রফিক বাহিনীর সদস্য আব্দুর রহমান তাকে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে আঘাত করেন। এতে তার মুখমণ্ডল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, নাকের ছিদ্র কেটে যায়। এরপর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়।
প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাজেলের শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি বলে জানিয়েছেন তার বাবা মোক্তার হোসেন। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে মোক্তার হোসেন বলেন, তার অবস্থা গুরুতর। হামলার ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত মুহাম্মদ জাগু প্রধান, আলাদি প্রধান, মোহাম্মদ আলআমিন, জয়নাল প্রধানও গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
হামলার শিকার লিপি প্রধান, মাসুদা প্রধান, জেসমিন প্রধানসহ বেশ কয়েকজন নারী চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু নতুন করে হামলার আশঙ্কায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সরেজমিন মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে নাওড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পুরো গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গ্রামটিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।
গ্রামের বাসিন্দা নুরজাহান বেগম জানান, রফিক বাহিনীর ফের সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে অধিকাংশ বাড়ির পুরুষরা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোতালেব ভূইয়া জানান, গত সোমবার রফিক ও মিজান বাহিনীর সন্ত্রাসীরা নাওড়া গ্রামের মানুষের বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট করে। এ সময় ৮ জনকে গুলিবিদ্ধ হয়, আহত হয় শিশুসহ ১৩ জন।
প্রবীণ এ নেতা বলেন, সারাজীবন দল করে আমাদের দল ক্ষমতায় থাকাকালীন দলের হাইব্রিড ভূমিদস্যু রফিক বাহিনী আমাদের গুলি করছে, বাড়িঘর ছাড়া করছে। স্থানীয় প্রশাসনের রহস্যজনক ভূমিকার কারণে সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার হচ্ছে না।
এদিকে, হামলার ঘটনায় মোস্তাফিজুর রহমান নীরব বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। এতে হামলাকারীদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম ও তার ভাই মিজানসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০ থেকে ৪০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
অভিযোগে মোস্তাফিজুর রহমান নীরব বলেন, আসামিরা অত্যন্ত উশৃংখল, দাঙ্গাবাজ, ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক। তারা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের বিরুদ্ধে আক্রমনাত্মক মনোভাব পোষণ করে আসছেন। আমাদের বাড়িঘর ও জমিজমা দখল করতে রফিকুল ইসলামের নির্দেশে মিজানুর রহমান ও কালা জসুর নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন সন্ত্রাসী আগ্নেয়াস্ত্র, শটগান, দা, রামদা, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল, সুইচ গিয়ার, চাকু, লোহার রড, এস এস পাইপ, হাতুড়ি নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এই ঘটনায় ১৩ জন আহত হয়। এর মধ্যে ৮ জন গুলিবিদ্ধ হয়। বর্তমানে ৫ জন গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
মামলার বাদী মোস্তাফিজুর রহমান নীরব জানান, সন্ত্রাসীরা এখনো হামলার পরিকল্পনা করছে। আমরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো অস্ত্র উদ্ধার অথবা একজন হামলাকারীকেও আইনের আওতায় আনতে পারেনি পুলিশ।
Posted ৯:২৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৪
ajkersangbad24.com | Fayzul Ahmed