মঙ্গলবার ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

হাওরে ধান কাটার ধুম : বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধানে চিটা

রেজুওয়ান কোরেশী, জগন্নাথপুর   |   মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   28 বার পঠিত

হাওরে ধান কাটার ধুম : বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধানে চিটা

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বোরো মৌসুমের ধান কাটার কাজ চলছে। পাকা ধানের ঘ্রাণে মুখরিত নলুয়া, মইয়ারসহ অন্যান্য হাওর। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত শ্রমিকরা দলবদ্ধভাবে ধান কাটছেন। হাওরে হাওরে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়েও চলছে কর্তনের কাজ। আগামী ২০/২৫ দিনের মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ হবে।

কৃষকরা জানান, হাইব্রিড জাতের হিরা-২ ধান ও এবার এ উপজেলায় উৎপাদিত বিনা-২৫ অধিক ভালো হয়। কিন্তু বোরো মৌসুমের ফসল উৎপাদনে অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষক ও বর্গাচাষী সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি। তবে ভালো ফলন ও আবহাওয়া অনকূলে থাকায় অনেকটা স্বস্তিতে আছেন তারা। এদিকে, কিছু কৃষকের বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধানে চিটায় ধরেছে বলে কৃষকেরা জানান।

জগন্নাথপুর উপজেলার ধানের ভান্ডার খ্যাত নলুয়ার হাওরে গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, পুরো হাওরজুড়ে সোনালী পাকা ধান ও আধা পাকা ধান ঝুলছে। জমিনে জমিনে কাজ করছেন শ্রমিক ও চাষীরা।

কৃষকেরা আরো জানান, এবার এখন পর্যন্ত হাওরে পানি না আসায় ও কোনো রকম প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হওয়ায় স্বস্তিতে ধান কাটছেন। কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে প্রতি কেদার জমির ধান কর্তনে ২ হাজার টাকা ও শ্রমিকরা জমি ও বস্তার হিসাব অনুযায়ী ধানের বিনিময়ে ধান কেটে দিচ্ছেন। প্রখর রোদ থাকায় ধান শুকাতেও কোনো রকম বেগ পেতে হচ্ছে না কৃষকদের। হাওরে অন্যান্য ধানের ফলন আশানুরূপ ভালো হলে বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধানে চিটা দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, এবারের বোরো মৌসুমে জগন্নাথপুর কৃষি কার্যালয় থেকে ধান বীজ ও সার পাননি। তারা বাজার থেকে বীজ ও সার ক্রয় করে চাষাবাদ করেন। অনেকে বঙ্গবন্ধু-১০০ ধান চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে এ উপজেলায় নতুন চাষ করা ফসল বিনা-১১ এর ফলন ভালো হয়।

 

 

হাওরে ধান ঝাড়া ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত কৃষানী আমিনা বেগম জানান, ৯ একর জমি চাষাবাদ করেন স্বামী আনফর আলী। তার্ াকৃষি নির্ভরশীল পরিবার। এবার ভালো ফলন হওয়ায় পরিবারের সবাই খুশি। আশা করছেন কিছুদিনের মধ্যে পুরো জমিনের ধান কর্তনের কাজ শেষ হবে।
জগন্নাথপুরের কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার পুরো জগন্নাথপুর উপজেলায় ২০ হাজার ৩শ ৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়। এরমধ্যে হাওরে ১৪ হাজার ৪শ ১০ হেক্টর জমিতে বোরো উৎপাদন করা হয়। চলতি মাসের ৫ এপ্রিল থেকে ধান কাটার কাজ শুরু হলে এ পর্যন্ত ১১শ ৫২ হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। রমজান মাস পর এখন পুরোদমে চলছে ধান কর্তনের কাজ। সিলেটের জৈন্তাপুর, সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরসহ, ময়মনসিংহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক জগন্নাথপুর উপজেলার ছোট-বড় হাওর ও কৃষি জমিতে ধান কাটার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ে ধান কাটার কাজ শেষ করার জন্য শ্রমিকদের পাশাপাশি ৬৮টি হারভেস্টার মেশিন দিয়ে পাকা ধান কর্তনের কাজ চলছে। ২০/২৫ দিনের মধ্যে পুরো ধান কর্তনের কাজ শেষ করতে বিভিন্ন স্থান থেকে আরো ১২টি মেশিনও সংগ্রহ করা হয়।

নলুয়ার হাওরের উত্তর রসুলপুরের বাসিন্দা কৃষক সাজন আলী বলেন, ১২ বিঘা জমিতে নিজ খরচে বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধান চাষ করেন কিন্তু সবগুলো ধানে চিটায় ধরায় তিনি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত।

কৃষক আলী আহমদ বলেন, তিনি ১৬ কেদার জমিতে ধান আবাদ করেছেন। ইতোমধ্যে ৬/৭ একর জমির ধান কেটেছেন। এর মধ্যে হিরা-২ ও বিনা-২৫ ধানের খুব ভালো ফলন হয়েছে। এ কৃষকও জানান, জমিজামা করতে কৃষি কার্যালয়ের সহযোগিতা পাননি।
জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাউসার আহমেদ জানান, এ পর্যন্ত জগন্নাথপুর উপজেলার ১১শ ৫২ হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড হিরা-২ ও নতুন উৎপাদিত বিনা-২৫ ভালো হয়। আমাদের যথেষ্ট তদারকি থাকাসত্ত্বেও কিছু কৃষক আমাদের নির্দেশনা সঠিকভাবে না মানায় বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধানে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি আশা করছেন ২০/২৫ দিনের মধ্যে সবগুলো জমির ধান কর্তন শেষ হবে।
তিনি আরো জানান, পুরো জগন্নাথপুর উপজেলায় প্রায় ৪০ হাজার কৃষক রয়েছেন কিন্তু সরকারি প্রণোদনায় সবাই সুবিধাভোগী হতে পারছেন না। এর ধারাবাহিকতায় এবার ও ২৬শ কৃষককে আউশ ধানের প্রণোদনা প্রদান করা হয়।

Facebook Comments Box

Posted ৭:৪৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

ajkersangbad24.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক
ফয়জুল আহমদ
যোগাযোগ

01712000420

fayzul.ahmed@gmail.com