শনিবার ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

অভাব দূর করতে ইসলামের শিক্ষা

আমিরুল ইসলাম লুকমান   |   রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   64 বার পঠিত

অভাব দূর করতে ইসলামের শিক্ষা

পৃথিবীতে মানুষের বিভিন্ন স্তর ও প্রকার আছে। এখানে কেউ সম্পদশালী আবার কেউ অসচ্ছল। ধনী-গরিবের এমন শ্রেণি ভাগ একান্তই আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাধীন। এখানে অন্য কারোর ইচ্ছাধিকার প্রকাশের সুযোগ নেই। ধনী-গরিবের এই তারতম্যের পেছনে আল্লাহ তায়ালার একমাত্র উদ্দেশ্য, শরিয়তের হুকুম-আহকাম সঠিকভাবে পালন করছে কি না, এ ব্যাপারে বান্দাদের পরীক্ষা করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘জেনে রেখো, তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য এক পরীক্ষা। আর মহাপুরস্কার রয়েছে আল্লাহরই কাছে’ (সুরা আনফাল : ২৮)।

সম্পদ ও সন্তানের মহব্বত মানুষের মজ্জাগত বিষয়। কিন্তু পরীক্ষা এভাবে যে, এ ভালোবাসা আল্লাহ তায়ালার নাফরমানি করতে উৎসাহ জোগায় কি না সেটা লক্ষ করা হবে। সম্পদ ও সন্তানের প্রতি ভালোবাসা যদি গুনাহ ও নাফরমানির দিকে নিয়ে যায়, তবে এটা মহামসিবতের কারণ।

আল্লাহ তায়ালার বানানো ধনী-গরিব শ্রেণির প্রভেদের অর্থ এই নয় যে, মানুষ অকর্মণ্য হয়ে ইচ্ছাকৃত দরিদ্রতা গ্রহণ করবে। বরং উচিত হবে, বৈধ সীমারেখার ভেতরে জীবনের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য অর্জনের চেষ্টা করা। কারণ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘দরিদ্রতা কখনো কখনো কুফুরিতে নিমজ্জিত করে’ (শুয়াবুল ঈমান)। দরিদ্রতা দূরকরণে ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। নানাবিধ মাধ্যম প্রয়োগ করে দরিদ্রতা নির্মূলের চেষ্টা করেছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের আর্থিক বৈষম্য মুছে ফেলতে একদিকে যেমন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি ও নিজ হাতে উপার্জন করার প্রতি ব্যাপক গুরুত্বারোপ করেছে, তেমনি ধনী শ্রেণির ওপর আর্থিক ইবাদতের বিধান আরোপ করেছে। উভয়ের সামষ্টিক বাস্তবায়নেই সমাজ-রাষ্ট্র থেকে দরিদ্রতা দূর হতে পারে। সমাজ ও রাষ্ট্রের অবস্থা বিবেচনায় ইসলাম দরিদ্রতা দূর করার জন্য বিশেষ মূলনীতি গ্রহণ করেছে।

পবিত্র কুরআন ও হাদিসে শ্রম বিনিময়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। জনজীবনে শ্রমের প্রয়োজনীয়তার কথা ব্যক্ত করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নামাজ শেষ হয়ে গেলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকার) সন্ধান করো। যাতে তোমরা সফলকাম হও’ (সুরা জুমা : ১০)। এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মুসলিম জাতিকে নামাজ আদায়ের পরই নিজের ও পরিবারের প্রয়োজন পূর্ণ করার লক্ষ্যে রিজিক তালাশের আদেশ করেছেন। ক্রয়-বিক্রয়, ক্ষেত-খামারসহ উপার্জনের যত মাধ্যম আছে, সব ব্যবহার করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘তিনিই তোমাদের জন্য ভূমিকে বশ্য করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা তার কাঁধে চলাফেরা করো ও তাঁর রিজিক খাও। তাঁরই কাছে তোমাদের পুনর্জীবিত হয়ে যেতে হবে’ (সুরা মুলক : ১৫)। সুতরাং প্রতিটি মুসলমানের উচিত, আর্থিক উন্নতির জন্য জমিনে ছড়িয়ে থাকা আল্লাহ প্রদত্ত রিজিক অনুসন্ধান করা। শারীরিক সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে দরিদ্রতামুক্ত জীবন অর্জনের চেষ্টা করা।

মানুষকে আল্লাহ তায়ালা জন্মগতভাবেই উপকরণ অবলম্বন করে রিজিক অন্বেষণের সামর্থ্য-সমৃদ্ধ করে সৃষ্টি করেছেন। ঘোষিত হয়েছে, ‘হে মানুষ! তুমি নিজ প্রতিপালকের কাছে না পৌঁছা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিশ্রম করে যাবে, পরিশেষে তুমি তাঁর সঙ্গে০ সাক্ষাৎ করবে’ (সুরা ইনশিকাক : ৬)। এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন, প্রতিটি মুসলিমের জীবিকার নিরাপত্তার জন্য উপার্জনে যুক্ত হওয়া আবশ্যক। তা ছাড়া আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর সবকিছুকেই মানুষের নিরাপত্তা ও শক্তি অর্জনের সহজ মাধ্যম বানিয়ে দিয়েছেন। এমনকি সমুদ্রের মাঝে চলমান বিশাল জাহাজকে পণ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে মানুষের রিজিক উপার্জনের বড় মাধ্যম বানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনিই তোমাদের প্রতিপালক, যিনি সাগরে তোমাদের জন্য নৌযান চালান, যাতে তোমরা তার অনুগ্রহ সন্ধান করো।’ (সুরা ইসরা : ৬৬)

পবিত্র কুরআনের মতো হাদিস শরিফের দিকে দৃষ্টিপাত করলেও আমরা দেখতে পাই, নবী করিম (সা.) দরিদ্রতা দূর করার প্রতি সীমাহীন গুরুত্বারোপ করেছেন। মুসলমানদের উপার্জনের প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। বলেছেন, ‘নিজ হাতে উপার্জন করে খাদ্য গ্রহণের চেয়ে উত্তম খাবার মানুষের আর হতে পারে না। দাউদ (আ.) স্বহস্তে উপার্জন করে জীবনধারণ করতেন’ (বুখারি : ২০৭২)। এই হাদিসে স্বহস্তে উপার্জনের গুরুত্ব ও দারিদ্র্য সমস্যার সরাসরি সমাধান রয়েছে। নবীগণ পৃথিবীর বুকে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হওয়া সত্ত্বেও বেকার অবস্থায় জীবন ধারণ করেননি, বরং নিজ হাতে উপার্জন করে জীবন অতিবাহিত করেছেন। অন্য একটি হাদিসে সাহাবায়ে কেরামের প্রশ্নের জবাবে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে আমিও মক্কার লোকদের ছাগল চরাতাম’ (বুখারি : ২২৬২)। দান-সদকা খেয়ে জীবনধারণ করা ইসলামি দৃষ্টিকোণে একটি নিকৃষ্ট পন্থা। এভাবে কখনোই কোনো ব্যক্তির দরিদ্রতা দূর হতে পারে না। পক্ষান্তরে নিজ হাতে উপার্জিত সম্পদই শ্রেষ্ঠ। যারা নিজ হাতে কর্ম করে উপার্জন করতে অনীহা প্রকাশ করে, তাদের জন্য হাদিসে বিরাট ধমকি রয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যারা মানুষের কাছে চেয়ে চেয়ে জীবনধারণ করে, কেয়ামতের দিন তারা মুখমণ্ডলে গোশতহীন অবস্থায় উত্থিত হবে।’ (বুখারি : ১৪৭৪)

অপরদিকে ধনীদের সম্পদে আল্লাহ তায়ালা গরিবদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ধনীদের সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ গরিবদের মালিকানায় দেওয়ার মাধ্যমে ইসলাম দরিদ্রতা নির্মূল করার প্রয়াস চালিয়েছে। দরিদ্রতা দূরকরণে জাকাত ইসলামের দ্বিতীয় পন্থা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘(হে নবী!) তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করো, যার মাধ্যমে তুমি তাদের পবিত্র করবে এবং যা তাদের পক্ষে বরকতের কারণ হবে’ (সুরা তওবা : ১০৩)। আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করার লক্ষ্যে এবং বিপুল পরিমাণ সওয়াব অর্জন করার উদ্দেশ্যে গরিব-দুঃখীদের দান-সদকা করা। বিত্তশালী ব্যক্তিবর্গকে নিজেদের অঢেল সম্পদ থেকে সামর্থ্য পরিমাণ সম্পদ দীনহীনদের দানে উৎসাহ করার মাধ্যমে ইসলাম দরিদ্রতা দূর করার চেষ্টা করেছে। ধনীদের সামান্য সহযোগিতায় যেকোনো ধনহীন ব্যক্তি নিজের জীবনে থেকে দরিদ্রতার আজাব দূর করতে সক্ষম হতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে অভাবজনিত যেসব কারণে গরিব মানুষ সাহায্য চাইতে বাধ্য হয়, সাধারণ দানের মাধ্যমে সেসব পরিস্থিতি বন্ধ হয়ে যাবে স্বাভাবিকভাবেই। মোদ্দাকথা, জীবন ও সমাজ থেকে দরিদ্রতা দূর করার জন্য ইসলাম নানা রকম মূলনীতি গ্রহণ করেছে। মানুষের উচিত এসব মূলনীতি অনুসরণ করে সমাজ থেকে অসচ্ছলতা দূর করার আপ্রাণ চেষ্টা করা।

Facebook Comments Box

Posted ৬:৩৯ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

ajkersangbad24.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গরিবের হক যাকাত
(695 বার পঠিত)
সম্পাদক
ফয়জুল আহমদ
যোগাযোগ

01712000420

fayzul.ahmed@gmail.com