শুক্রবার ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বন্ধুত্বের

মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ   |   সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   60 বার পঠিত

ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বন্ধুত্বের

ছবি: প্রতীকী

একটি পরিবারে পিতা-মাতার পরেই স্বামী-স্ত্রী। মূলত স্বামী-স্ত্রীকে কেন্দ্র করেই পরিবার গড়ে ওঠে। ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বন্ধুত্বের। কোরআন মাজিদের ভাষায়, ইমানদার নর ও নারী পরস্পরের বন্ধু ও সাথি; তারা ভালো কাজের আদেশ করে ও মন্দ কাজে নিষেধ করে। আল্লাহপাক স্বামী-স্ত্রীর প্রকৃতিতেই পরস্পরের প্রতি প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা দান করেছেন। তারপরও আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) তাদের পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে নানা কথা বলেছেন। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি দয়া ও ভালোবাসা পোষণ করবে এবং হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে সেটি বলে গেছেন ও দেখিয়ে দিয়েছেন। স্ত্রীদের প্রতি দয়া ও ভালোবাসা প্রকাশ করতে তিনি কার্পণ্য করেননি।

দাম্পত্যজীবন একান্ত গোপনীয়। তারপরও উম্মতের শিক্ষার জন্য তিনি তার স্ত্রীদের প্রকাশ করার জন্য বলেছেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মেজাজি ও কাটখোট্টা টাইপের ছিলেন না। তিনি তার স্ত্রীদের সঙ্গে হাস্যরস করেছেন, দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন, হজরত আয়েশা (রা.) গ্লাসের যেখানে ঠোঁট লাগিয়ে পানি খেয়েছেন, তিনি সেখান থেকে পানি পান করেছেন, গোশের হাড্ডিটা হাত থেকে নিয়ে যেখানে হজরত আয়েশা (রা.) কামড় দিয়েছেন, তিনিও সেখানে কামড় দিয়েছেন। নিজ স্ত্রী হজরত আয়েশা (রা.) কে পেছনে রেখে মদিনার মসজিদে হাবশিদের খেলা দেখিয়েছেন। এসবই স্ত্রীর মনোরঞ্জন ও ভালোবাসার প্রকাশ। আবার স্ত্রীর সঙ্গে সদাচরণের তাগিদ দিয়ে বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। তেমনিভাবে স্বামীর আনুগত্যকে জান্নাতে যাওয়ার শর্ত করে দিয়েছেন। মেরাজের রাত্রে জাহান্নামে নারীর আধিক্য দেখে তিনি বলেন, এর অন্যতম কারণ স্বামীর অবাধ্যতা। আবার বলেছেন, যে নারী আল্লাহর হক ও স্বামীর হক পালন করে, সে তার খুশিমতো দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি সদাচরণ প্রসঙ্গে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রচুর উক্তি রয়েছে। এক কথায় বলা যায়, স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি সুবিচার জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম শর্ত। স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা চোখকে শীতল করে দেওয়ার জন্য আল্লাহপাক তার কাছে দোয়া করতে বলেছেন। সুরা ফুরকান : ৭৪

পৃথিবীর জীবনে আল্লাহর পক্ষ থেকে সেরা উপহার হলো চক্ষু শীতলকারী স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান। বিপরীত হলে মানুষের জীবন হয়ে যায় অসম্ভব যন্ত্রণার। বর্তমানে আমরা প্রায়ই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ-বিবাদ এবং নানা কারণে বিচ্ছেদের কথা শুনি। দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কখনো মনোমালিন্য হবে না, এমনটি নয়। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনেও ঘটেছে এবং সেটি দ্রুত মীমাংসা করে নেওয়ার জন্য তিনি বলেছেন।

আল্লাহপাক আমাদের সামনে তার অনেক প্রিয় বান্দার উদাহরণ পেশ করেছেন, যাদের দাম্পত্যজীবন মোটেই সুখকর ছিল না। আমরা হজরত লুত (আ.) ও হজরত আসিয়া (আ.)-এর উদাহরণ জানি। বস্তুত আল্লাহর কাছে নবীর স্ত্রী ও নবীর পুত্র কোনো মূল্য বহন করে না। মূল্য বহন করে ইমান ও নেক আমলের।

আল্লাহতায়ালা সুরা তাগাবুনে ইমানদারদের সতর্ক করে বলেছেন, তোমাদের স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির মধ্যে কতিপয় শত্রু। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। আর যদি তোমরা ক্ষমা ও সহনশীল আচরণ করো ও ক্ষমা করে দাও তাহলে আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল ও দয়ালু। আয়াত : ১৪

আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের মধ্যে উদারতা ও ক্ষমাশীলতা দেখতে চান। যার মধ্যে ক্ষমাশীলতার গুণ রয়েছে, সে আল্লাহর ক্ষমা লাভ করবে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কতভাবেই না ক্ষমার কথা বলেছেন। যে তার ভাইয়ের অপরাধ ক্ষমা করবে আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন তার অপরাধ ক্ষমা করবেন। এখানে ভাই মাত্র উদাহরণ। আমরা স্বামী-স্ত্রী, পিতা-পুত্র-কন্যা, প্রতিবেশী সবার প্রতি সদাচরণ করি এবং একে অপরকে ক্ষমা করি। হরজত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জমিনে যারা আছে তাদের সঙ্গে সদাচরণ করো, তাহলে আসমানে যিনি আছেন, তিনিও তোমাদের সঙ্গে সদাচরণ করবেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়, একজন মহিলা ইবাদত-বন্দেগিতে খুবই আন্তরিক কিন্তু তার আচরণে মানুষ অতিষ্ঠ তার পরিণতি কী? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জবাব দেন, সে জাহান্নামি পক্ষান্তরে আর একজন মহিলা ইবাদত-বন্দেগিতে দুর্বল কিন্তু সদাচারী, তার সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, সে জান্নাতি। আমাদের এটাও বুঝতে হবে সদাচরণের বড় হকদার ঘরের লোকজন। বাইরে খুবই ভদ্র, নম্র ও বিনয়ী কিন্তু নিজের নিকটবর্তী লোকজন তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ সে আসলে শয়তান।

Facebook Comments Box

Posted ৪:৪৭ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩

ajkersangbad24.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গরিবের হক যাকাত
(695 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক
ফয়জুল আহমদ
যোগাযোগ

01712000420

fayzul.ahmed@gmail.com