অনলাইন ডেস্ক | রবিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট | 37 বার পঠিত
ভারত থেকে শুরু হয়েছে আলু আমদানি। শনিবার (৩ জানুয়ারি) ভারতীয় ৩টি ট্রাকে ৭৪ মেট্রিক টন আলু আমদানি হয়েছে। প্রতি মেট্রিক টন আলুর আমদানি মূল্য ১৫৫ মার্কিন ডলার খরচ পড়েছে। আর আলু আমদানির এই খবরেই দেশের বাজারে কেজি প্রতি দাম কমে গেছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আমদানির খবরেই দাম পড়ে যাওয়ায় প্রমাণ হয়, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এতোদিন ইচ্ছে করেই দাম বাড়িয়ে ক্রেতার পকেট ফাকা করেছে।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সরকার আলু আমদানির অনুমতি দেয়। আমদানির অনুমতির খবরেই শুক্রবার কেজি প্রতি আলুর দাম কমে যায় ১০ টাকা, আর শনিবার আলুর প্রথম চালান হিলি বন্দর দিয়ে প্রবেশ করার খবরে কেজিতে আরো ১০ টাকা দাম কমে যায়। ফলে গত দুই দিনে দেশের বাজারে আলুর কেজিতে দাম কমেছে ২০ টাকা। তিন দিন আগেও যেখানে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বাজারে এক কেজি আলু কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। সেখানে এখন দাম কমে এক কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। আলুর দাম কমে আসায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আলু ব্যবসায়ী ও বেঙ্গল আলু ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী আবু বকর সময়ের আলোকে বলেন, ‘তিন-চার দিন আগেও আমরা রাজধানীর শ্যামবাজার থেকে প্রতি কেজি আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় কিনে এনেছি, বিক্রি করেছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। আজ শনিবার কিনেছি ৩০ টাকা কেজিতে, আর আমি বিক্রি করছি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা দাম কমার কারণ সম্পর্কে জানান, ভারত থেকে আলু অসা শুরু হওয়ায় দাম পড়ে গেছে, তাই তারাও দাম কমিয়ে দিয়েছেন।’
এদিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আলু এমন একটি পণ্য, যা প্রতিদিন দরকার পড়ে। তাই আলুর দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এতোদিন আমাদের খুবই কষ্ট হয়েছে। দেখা গেছে, যখন দাম কম ছিল তখন একসঙ্গে ২ কেজি আলু কিনতাম, কিন্তু দাম বেড়ে ৬০-৭০ টাকা হবার সময় আধা কেজি আলু কিনে ঘরে ফিরতে হয়েছে। এখন দাম কমে আসছে শুনে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি। আসলে সব কিছুর দাম এতো বেশি যে সংসার চালাতেই আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
হিলি স্থলবন্দরে হিলি স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গোনিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কর্মকর্তা ইউসুফ আলী জানান, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৫২ জন আমদানিকারক প্রায় ৩২ হাজার মেট্রিক টন আলু আমদানির অনুমতি পেয়েছেন।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি জানান, ভারত থেকে এই বন্দর দিয়ে আলু আমদানি শুরু হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আলুগুলো আমদানি করা হচ্ছে। বাংলাদেশে সব খরচ দিয়ে ২০ টাকা কেজির মধ্যে বিক্রয় করা হবে।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেও কমেছে আলুর দাম
আমদানির খবরে চট্টগ্রামের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে কমতে শুরু করেছে আলুর দাম। এই বাজারে কেজিতে আলুর দাম কমেছে ৪ টাকা। এর আগে ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বন্ধ হয়ে যায় আলু আমদানি। এরপর খাতুনগঞ্জে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে আলুর বাজার। তবে নতুন করে আমদানির অনুমতি পাওয়ায় শনিবার থেকে আবারও কমতে শুরু করেছে পণ্যটির দাম। ফলে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খাতুনগঞ্জে গত ৩০ জানুয়ারি পাইকারিতে প্রতি কেজি আলু ৩৫ টাকায়, ৩১ জানুয়ারি ৩৩ টাকায় বিক্রি হয়। তবে পাইকারিতে শনিবার প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয় ২৯ টাকায়। যদিও একই দিন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয় ৫০-৫৫ টাকায়।
চট্টগ্রামের চাক্তাইয়ের পাইকারি আলু বিক্রেতা আফরা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আলা উদ্দিন আলো জানান, যেহেতু ভারতীয় আলু আসা শুরু হয়েছে, পণ্যটির দাম আরও কমে যাবে। গত মঙ্গলবার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে আলুর পাইকারি দর ছিল কেজিতে ৩৫ টাকা। গত বুধবার তা ২ টাকা কমে ৩৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। শনিবার আরও কমে কেজি ২৯ টাকায় নেমেছে। তবে ভারতীয় আলুর চেয়ে বাংলাদেশি আলুর মান ভালো বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘আসন্ন রোজা ঘিরে ভোগ্যপণ্যের আমদানি জরুরি হয়ে পড়েছে। আলু, পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ার খবর পেয়েছি। আমদানি বাড়লে আমাদের ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আসার কথা। কিন্তু প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে এখন থেকে রোজার আগ পর্যন্ত কঠোরভাবে সবকিছু তদারকি করতে হবে। তাহলে ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা রাখি।’
উল্লেখ্য, সরবরাহ কমের অজুহাতে দেশে আলুর দাম বেড়ে গেলে বাজার নিয়ন্ত্রণে গত বছরের ৩০ অক্টোবর সরকার আমদানির অনুমতি দেয়। আমদানির মেয়াদ ছিল গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। পরে ব্যবসায়ীদের আবেদনের ভিত্তিতে সময়সীমা আরও ১৫ দিন বাড়িয়ে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। ১৫ ডিসেম্বর থেকে বন্দর দিয়ে আলু আমদানি বন্ধ রয়েছে। নতুন করে আমদানি শুরুর খবরে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে বন্দরে।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানি গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বন্দর দিয়ে ৩৫ হাজার টন আলু আমদানি করা হবে। ৫০ জন আমদানিকারকের মাধ্যমের আলু আমদানি করছে সরকার। আমদানি করা এসব আলু বাজারে ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করা হবে।
Posted ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ajkersangbad24.com | Fayzul Ahmed
.
এ বিভাগের আরও খবর