শুক্রবার ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

হয়রানিমুক্ত পরিবেশ পেয়ে খুশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা : জমে উঠছে লালদিঘিরপাড় হকার মার্কেট নগরের ফুটপাত এখন হকারমুক্ত

ফয়জুল আহমদ   |   শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   57 বার পঠিত

হয়রানিমুক্ত পরিবেশ পেয়ে খুশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা : জমে উঠছে লালদিঘিরপাড় হকার মার্কেট নগরের ফুটপাত এখন হকারমুক্ত

সিলেট নগরের ফুটপাত এখন হকারমুক্ত। বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, পুলেরমুখ ও সুরমা পয়েন্ট ফুটপাতসহ কোথাও নেই হকার। সবাইকে পুনর্বাসন করা হয়েছে লালদিঘিরপাড় হকার মার্কেট মাঠে। পুরোদমে চলছে বেচাকেনা। নগরবাসী মনে করছেন এই উদ্যোগ সবার জন্য ভাল হয়েছে। সড়কের পাশে ফুটপাতে হকাররা না থাকায় পথচারিদের চলাচলে সুবিধা হচ্ছে। পুলিশি হয়রানি ও চাঁদাবাজি থেকে মুক্ত হয়ে ব্যবসার জন্য একটা স্থায়ী জায়গা পেয়ে হকাররাও খুশি। হকার মার্কেটে ইতিমধ্যে বেচাকেনাও বেশ জমে উঠেছে। বিশেষ করে মাছ, মসলা, সবজির দোকানে উপচেপড়া ভিড়।

হকাররা জানিয়েছেন, আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে বাঁশ ও কাপড় দিয়ে ছাদ তৈরির কাজ শেষ হবে। এরপর কাপড়ের ব্যবসায়ীরা পুরোদমে বসবেন।

জানা যায়, মাঠের কিছু সমস্যা সমাধানে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এখনো কাজ করা হচ্ছে। সর্বশেষ দুটি বাথরুম নির্মাণের কাজ চলছে। একটি ডিপটিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া আগেই লাইটিং করে দেওয়া হয়েছে। পুরো মাঠে মাটি ভরাট করে দেওয়া ছাড়াও ইট বিছিয়ে দেয়া হয়েছে। ফুটপাত ছেড়ে যাওয়া হকাররা এখন তাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও হকারদের বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিতে কাজ চলছে। লালদিঘিরপাড় হকার মার্কেটের ভেতরে থাকা হকারদের জন্য বড় সমস্যা হচ্ছে রাস্তা। ওই মাঠের নিজস্ব কোনো স্থায়ী রাস্তা নেই। একাধিক রাস্তা থাকলেও সেগুলো ব্যবহার করছে অন্যান্য মার্কেট। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সিটি সুপার মার্কেট, কুদরত উল্লাহ মার্কেট, হকার মার্কেটসহ কয়েকটি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা রাত ১০টার মধ্যে তাদের দোকান বন্ধ করে দেন। ফলে হকার মার্কেটে মাঠে থাকা ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের ঢুকতে ও বের হতে সমস্যা দেখা দেয়।

হকার পুনর্বাসন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতারা কেনাকাটা করছেন। সবজি, মাছ, মাংস, পোশাকসহ সবকিছু পাওয়া যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের সাথে দরদাম করে বিক্রিতে ব্যস্ত। আবার কেউ কেউ আছেন বাঁশ দিয়ে দোকান কোঠা তৈরিতে ব্যস্ত। অন্য একদল হকারদের জন্য বাথরুম তৈরি করছেন।

 

 

কথা হলো আলী হোসেন নামে এক সবজি ব্যবসায়ীর সাথে। তিনি বলেন, ‘বেচাবিক্রি হচ্ছে। তবে ফুটপাতের তুলনায় কম। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। জানা শোনা হলেই ব্যবসা বাড়বে।’

মিরাজ নামের আরেক ব্যবসায়ী জানান, এই মার্কেটের কথা জানাজানি হলে ব্যবসা বাড়বে। অনেকেইতো জানেন না এখানে যে বড় একটা মার্কেট হয়েছে। যেখানে কমদামে সবজিসহ জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে।
ফাহিম নামে এক কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, ‘আলহামদুলিল্লা। ব্যবসা যা হচ্ছে খারাপ না। ব্যবসা আরো ভালো হবে। তবে যা হচ্ছে ভালো। কারণ পুলিশ তো আমাদের তাড়া করছে না। এছাড়া আমরা একটা স্থায়ী জায়গা পেয়েছি। এটাতো অনেক কিছু’।

নামপ্রকাশ না করা শর্তে আরও এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ফুটপাতে আমাদের ব্যবসা হয়েছে ভালো। কিন্তু প্রতিদিন পুলিশকে চাঁদা দেওয়া লাগতো। পুলিশ ছাড়াও অন্যান্য চাঁদা দেওয়া লাগছে। এখানেতো এই চাঁদাগুলো দেওয়া লাগছে না। এছাড়া আমরা ব্যবসার জন্য একটি স্থায়ী জায়গাও পেলাম। যদি মেয়র মহোদয় হকার মাঠে প্রবেশের জন্য মাঠের উত্তর ও দক্ষিণ দিক থেকে প্রবেশের জন্য রাস্তা করে দেন তাহলে সবার জন্য সুবিধা হবে। আমাদের ব্যবসাও ভালো হবে। ক্রেতারাও মাঠে সহজে প্রবেশ করতে পারবেন’।
আবুল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী জানান, মেয়র মহোদয় প্রতিদিনই এই মার্কেটের খোঁজখবর রাখছেন। তিনি আশ^াস দিয়েছেন এখানে যাতে ভালো ব্যবসা হয় সেটার তিনি একটা উদ্যোগ নেবেন। তবে মাঠে প্রবেশের জন্য উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি রাস্তার প্রয়োজন।

 

 

সবজি মার্কেটের নিয়মিত ক্রেতা সাগর তালুকদার সিটি মেয়রের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘হকার পুনর্বাসন করায় সবার জন্য ভাল হয়েছে। এখন আমরা ফুটপাতে নির্বঘ্নে হাঁটাচলা করতে পারছি। যানজট অনেকটা কমেছে। তবে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে হাকারমুক্ত হলে কি হবে রাস্তা যেন গাড়ি পার্কিং করে ব্লক করে না দেওয়া হয়। যারা গাড়ি চালান তারা যেন যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং না করেন’।
আরেক ক্রেতা সঞ্জয় বণিক বলেন,‘ বাসা থেকে নির্বিঘ্নে হেঁটে এলাম, নেই কোনো যানজট, নেই কোনো ধাক্কাধাক্কি। আগে আমি সবজি কিনতাম রাস্তা থেকে এখন মার্কেটের ভিতর গিয়ে সবজি ও অন্য জরুরি জিনিস কিনব তাতেও শান্তি। মেয়রের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই’।
সবজি ক্রেতা মাওলানা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়রের এ উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। হকার পুনর্বাসন দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে বন্দরবাজার থেকে সরাসরি এ মাঠে প্রবেশের রাস্তা করে দিতে হবে। তখন হকারদের ব্যবসা ভাল হবে। তারা এখানে স্থায়ী হবে’।
সিলেটের হকার ঐক্য পরিষদের সভাপতি আব্দুর রকিব জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে এ মাঠে অন্তত ৩ হাজার হকার এসে দোকান খুলেছেন। মাঠের বাইরে যারা থাকবে তাদের উচ্ছেদ করলে হকার সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের তালিকায় যারা হকার ছিলেন তাদের অধিকাংশই দোকান বরাদ্দ পেয়ে গেছেন। এখন যারা নতুন আসছেন তাদেরও জায়গা দেয়া হচ্ছে’।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জানান, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এই মার্কেট নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। যাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রেখে সংসার চালাতে পারেন। মার্কেটটি যাতে জমে উঠে এজন্য সিটি করপোরেশনের বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে। এর মাধ্যমে এই মার্কেটের ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই উপকৃত হবেন। স্থায়ী রাস্তা তৈরি করে দিতে সিটি করপোরেশন কাজ করছে বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘কুদরত উল্লাহ মার্কেটের পাশ দিয়ে রাস্তা করা যায় কিনা- এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আমি নিজেও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বিষয় নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা ও সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখছি। তাদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে দিকটা নজর রাখছি’।

 

Facebook Comments Box

Posted ১২:২৩ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪

ajkersangbad24.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক
ফয়জুল আহমদ
যোগাযোগ

01712000420

fayzul.ahmed@gmail.com