মঙ্গলবার ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

ভার্চুয়াল বিরোধী দল

ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)   |   বৃহস্পতিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   41 বার পঠিত

ভার্চুয়াল বিরোধী দল

রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চল্লিশ শতাংশের বেশি ভোটারের উপস্থিতি এবং দ্রুততম সময়ের ভিতরে পৃথিবীর ছোট-বড় তাবৎ সরকার কর্তৃক শেখ হাসিনার সরকারের স্বীকৃতিতে বিএনপির খুব ভালো করেই বোঝা হয়ে গেছে যে, তাদের পরিণতিটা সামনে কি হতে যাচ্ছে! আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অধুনালুপ্ত মুসলিম লীগের প্রতিবিম্ব দেখতে পেয়ে তারা এখন টিকে থাকার শেষ চেষ্টা হিসেবে বিলুপ্তিপূর্ব মুসলিম লীগের স্ট্র্যাটিজিটি আপন করে খড়কুটোকে আঁকড়ে ধরে ডুবন্ত তরী বাঁচাবার চেষ্টা করছে ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ বাংলাদেশের তুলনাতেই যেখানে অতিশয় ক্ষুদ্র, সেখানে ভারতের সামনে তো আক্ষরিক অর্থেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র। এহেন মালদ্বীপের মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য সম্প্রতি অসাধারণ একটি কাজ করে বসেছেন। এমনই অসাধারণ যে, যাকে বলে ‘সেই রকম’ আর কি। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীকে সম্বোধন করতে গিয়ে তারা দুজনই একটি আপত্তিকর শব্দ প্রয়োগ করেছেন। এরপর বহু জল গড়িয়েছে আরব সাগর আর ভারত মহাসাগরে।

একপর্যায়ে মালদ্বীপের নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মালদ্বীপে মোতায়েনকৃত হাতেগোনা মুষ্টিমেয় সংখ্যক ভারতীয় সেনাসদস্যের দ্বীপ রাষ্ট্রটি থেকে প্রত্যাহারের সময়সীমা পর্যন্ত বেঁধে দিয়েছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই আলোচিত কন্টিনজেনটি মালদ্বীপে রয়েছে দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে। শ্রীলঙ্কার সেই সময়কার প্রবল প্রতাপশালী তামিল টাইগারস গেরিলারা ঝটিকা অভিযানে দ্বীপরাষ্ট্রটিকে এক রকম দখলই করে ফেলেছিল।

মালদ্বীপের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার ও সংহত করতেই ভারত তখন মালদ্বীপে পাল্টা সেনা অভিযান পরিচালনা করে। ভারতীয় বাহিনীর মূল কন্টিনজেনটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও সেই থেকে তাদের ক্ষুদ্র একটি সেনাদল মালদ্বীপে মোতায়েন রয়েছে। যেমনভাবে মার্কিন সেনারা সেই কবে দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পর থেকে এখনও মোতায়েন রয়েছে জাপান অথবা জার্মানিতে। এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। জাতির পিতার জন্মদিনে তার অনুরোধে, তার জন্মদিনের উপহার হিসেবে ১৯৭২-এর ১৭ মার্চ বাংলাদেশ থেকে সর্বশেষ ভারতীয় সেনা সদস্যটিকেও প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী।
মালদ্বীপের স্বচ্ছ পানিকে ঘোলা করার প্রয়াস এখনো অব্যাহত আছে। সেদেশে এখন শুরু হয়েছে ‘ইন্ডিয়া আউট’ আন্দোলন। আর এর জেরে অশান্ত হতে বসেছে দ্রুত বর্ধনশীল এই অঞ্চলটি। ক্ষমতা, তা সে যত নগণ্যই হোক না কেন, তার অপপ্রয়োগ যে কতটা ভয়াবহ পরিণতির কারণ হতে পারে, তারই কিছুটা নমুনা আমরা হালে মালদ্বীপে মঞ্চায়িত হতে দেখেছি। গণতান্ত্রিক চর্চা আর আচার-আচরণে অনভিজ্ঞ মালদ্বীপের সংসদ সদস্যদের পবিত্র সংসদে হাতাহাতির দৃশ্য সদ্যই দেখেছে বিশ্ববাসী। পরিস্থিতি আরও জটিল হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ, স্বচ্ছ জল যখন ঘোলাটে, তখন তাতে মাছ শিকারে এরই মধ্যে এগিয়ে এসেছে প্রতিবেশী আরেক বৃহৎ পরাশক্তি।

বাংলাদেশেও হালে শুরু হয়েছে এই ক্যাম্পেনটি। পালে হাওয়া না পেলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ক্যাম্পেনটির উপস্থিতিটা বোধকরি জোরালোই। কারণ, আমার চোখে না পড়লেও ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ায় এর আওয়াজ-টাওয়াজ নাকি ভালোই শোনা যাচ্ছে। এতটাই যে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এ নিয়ে কলাম-টলামও লেখালেখি হচ্ছে বেশ। মালদ্বীপে এটি একদল সদ্য পাখা গজানো পিপীলিকার লম্ফ-ঝম্প হলেও, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি এত সহজভাবে ব্যাখ্যা করার কোনো সুযোগ নেই। বিএনপি নানা কারণেই এমন একটা স্ট্র্যাটিজি গ্রহণ করেছে বলে বোদ্ধারা মনে করছেন। যারা এবারের নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতিকে তাদের বোকামি বলে ভাবছেন তারাই আসলে বোকার রাজ্যে বাস করছেন। ২০০৯-এ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রাপ্ত আসন ছিল ত্রিশের ঘরে। আর আওয়ামী লীগের ছিল দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা।

সংগত কারণেই তার পরের নির্বাচনে বিএনপি ভোটের বদলে আগুন সন্ত্রাসে বেশি মনোযোগী হয়েছিল। গত নির্বাচনের সময় আস্তাকুঁড়ের সব দল নিয়ে বিএনপির আরও একটি নির্বাচনী অভিযাত্রার ফলাফল ছিল আরও ভয়াবহ। সবাই মিলে গোটা দশেক অশ^ডিম্বও প্রসব করতে পারেনি সে যাত্রায়। অতএব, এবার যে তারা নির্বাচন বানচালের সর্বশক্তি নিয়োগ করে আগুন লাগাবে বাসে-ট্রেনে আর পিটিয়ে মারবে পুলিশ, তাতে আর অবাক হওয়ার কি আছে?

তারপরও শত রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চল্লিশ শতাংশের বেশি ভোটারের উপস্থিতি এবং দ্রুততম সময়ের ভিতরে পৃথিবীর ছোট-বড় তাবৎ সরকার কর্তৃক শেখ হাসিনার সরকারের স্বীকৃতিতে বিএনপির খুব ভালো করেই বোঝা হয়ে গেছে যে, তাদের পরিণতিটা সামনে কি হতে যাচ্ছে! আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আধুনালুপ্ত মুসলিম লীগের প্রতিবিম্ব দেখতে পেয়ে তারা এখন টিকে থাকার শেষ চেষ্টা হিসেবে বিলুপ্তিপূর্ব মুসলিম লীগের স্ট্র্যাটিজিটি আপন করে খড়কুটোকে আঁকড়ে ধরে ডুবন্ততরী বাঁচাবার চেষ্টা করছে।

অর্থাৎ ভারতবিরোধিতা আর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের টার্গেটে পরিণত করে আরও এক দফা এদেশে উগ্র মৌলবাদকে জাগিয়ে তোলার ব্যর্থ অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
বিএনপির ভারতবিরোধিতার আরেকটি বড় কারণ, পাকিস্তানে তাদের শিকড়টা আরেকটু শক্ত করা। গত নির্বাচনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখার প্রশ্নে ভারত এবং চীনের ভূমিকা ছিল অভিন্ন। রাশিয়ারও। অথচ বিএনপির মুখে শুধু ইন্ডিয়া আউট, চায়না না। এ অঞ্চলে এই মুহূর্তে পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখছে চীনই, নচেৎ শ্রীলঙ্কার চেয়েও ঢের বেশি সংকটে পড়তে হতো তাদের।

যে কারণে বিএনপির প্রোপাগাণ্ডা মেশিনারির মুখে কখনো চীনবিরোধী কোনো উচ্চারণ শোনা যাবে না। তবে সুবিধাটা হচ্ছে এই যে, গত কয়েকটি নির্বাচনে বিএনপির নাড়ি-নক্ষত্রের খবর বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জানা হয়ে গেছে। মানুষ এখন খুব ভালোই বোঝে কারা মানুষের জন্য আর কাদের কাছে মানুষ শুধুই পণ্য। ভারতবিরোধিতা তাই ঘুরে-ফিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় আর ভার্চুয়াল জগতেই।

আর যেই জগতে সত্যিকারের মানুষগুলোর বসবাস, সেখানে এই ক্যাম্পেন খুঁজতে গেলে খুলতে হবে ওই ফেসবুকের পাতাই। অবস্থা যা দেখছি, তাতে বিএনপির বোধকরি ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রথম ভার্চুয়াল বিরোধী দলে পরিণত হতে খুব একটা বেশি সময় লাগছে না।

লেখক : অধ্যাপক, ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।

Facebook Comments Box

Posted ৮:৩৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ajkersangbad24.com |

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক
ফয়জুল আহমদ
যোগাযোগ

01712000420

fayzul.ahmed@gmail.com