অনলাইন ডেস্ক | মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 42 বার পঠিত
সুইডিশ ভাষায় ‘ফেস্ট’ শব্দের ইংরেজি অর্থ ‘পার্টি’, আর বাংলা ভাষায় ‘পার্টি’ শব্দটি বেশ পরিচিত। জানুয়ারি মাস বছরের প্রথম মাস। সব কিছুতে নতুনত্বের অনুভূতি থাকে, যার কারণে মাসটি দ্রুত চলে যায়। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে, সুইডেনে ‘স্পোর্টলোভ’ বা শীতকালীন ছুটি উদযাপিত হয় এক সপ্তাহ ধরে।
এ সময় স্কুল বন্ধ থাকে এবং ছোট-বড় সবাই তুষারে স্কিইং থেকে শুরু করে স্কেটিং পর্যন্ত বিভিন্ন অ্যাকটিভিটিতে অংশ নেয়। এই অ্যাকটিভিটিগুলো বেশিরভাগই পার্টির মধ্যে পড়ে, যেমন একসঙ্গে স্কী করা, সাওনাতে গরম এবং ঠান্ডা পরিবেশে গোসল করা, তুষারের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করা, একসঙ্গে ডিনার করা—এগুলো ছোট-বড় সবার জন্য একটি আনন্দময় বিশেষ সময় হয়ে থাকে।
মার্চ মাসে সাধারণত তেমন কোনো উৎসব হয় না, তবে এপ্রিলে যিশুখ্রিস্টের পুনরুত্থান তথা অলৌকিক ঘটনাটিকে স্মরণ করার জন্য ইস্টার উৎসব উদযাপিত হয়। এটি খ্রিষ্টীয় বর্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি পুরাতন জীবন অবসানের পর নতুন জীবন শুরুর প্রতীক। এ সময় স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে। অনেকেই এই ছুটিতে সুইডেন বা ইউরোপের বাইরে গরমের দেশে সময় কাটাতে পছন্দ করে।
সুইডেনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজকীয় পার্টি হয় ১০ ডিসেম্বর, আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে। যদিও এটি একটি মৃত্যুবার্ষিকী, তবে দিনটি পালিত হয় আনন্দ-ফুর্তির মধ্য দিয়ে। কারণ, সারা পৃথিবী থেকে সেরা ব্যক্তিরা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে নোবেল পুরস্কারের জন্য সম্মানিত করা হয়। নোবেল পুরস্কারকে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পদক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ডিসেম্বর মাসেই খ্রিষ্টানদের বড়দিন উদযাপিত হয় এবং সুইডেনে বড়দিন পালনের সময়টি বেশ আনন্দময়।
বড়দিন পালনের পরপরই শুরু হয় নতুন বছরকে বরণ করার প্রস্তুতি। নববর্ষ উদযাপন বা দিনটিকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরের প্রথম দিনকে বরণ করার জন্য নানা অনুষ্ঠান হয়। দিনের শেষে সুইডেনের শীতের দেশে, ঘরে-বাইরে সবাই অপেক্ষায় থাকে— কখন ঘড়ির কাটায় রাত বারোটা বাজবে, কখন ঘণ্টা বাজবে, আর কখন শ্যাম্পেনের বোতল খুলে নববর্ষ দিবসে চিয়ার্স বলতে হবে, সেই প্রতীক্ষায় আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা।
বিদায়ী বছর: সুখ-দুঃখের মিশ্র অভিজ্ঞতা
২০২৪ সালে কিছু অর্জন ও ব্যর্থতা, দুটোই ছিল। তবে, সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল মহামারি-পরবর্তী জীবনযাত্রা। সুইডেনে বসবাসকারী হিসেবে, আমি লক্ষ্য করেছি কীভাবে মানুষ একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন করেছে এবং কীভাবে সবাই তাদের জীবনে স্থিতি আনার চেষ্টা করছে। কাজ, সম্পর্ক এবং দিনশেষে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার জন্য এক কঠিন লড়াই ছিল।
নতুন বছর আমাদের একটি নতুন সূচনা দেয়। আমি বিশ্বাস করি ২০২৫ সালে আরও অনেক অর্জন এবং প্রত্যাশা পূরণের সুযোগ পাবো। সুইডেনে থাকার অভিজ্ঞতায়, আমি বুঝেছি যে আমাদের জীবনে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো শুধু একটি পালাবদল নয়, এটি জীবনের নতুন শুরু।
৩১ ডিসেম্বর সুইডেনে নববর্ষের উদযাপন একটি বিশেষ দিন। এই দিনটি আমার কাছে শুধু একটি দিন নয়, এটি সকল কঠিন সময়ের শেষে আনন্দের এক মুহূর্ত। সুইডেনের বন্ধুদের সঙ্গে এটি কাটানোর অভিজ্ঞতা প্রতিটি মুহূর্তেই আনন্দদায়ক।
২০২৪ আমাকে শিখিয়েছে যে জীবনে সব কিছু পূর্বনির্ধারিত নয়, তবে নিজের চেষ্টার মাধ্যমে আমরা সব বাধা কাটিয়ে যেতে পারি।
২০২৫ সাল আমাদের সবার জন্য একটি নতুন দিগন্ত, নতুন সুযোগ এবং স্বপ্ন নিয়ে আসুক। সুইডেনে কাটানো সময় আমাকে শিখিয়েছে যে, একে অপরের সহযোগিতা এবং ভালোবাসা ছাড়া জীবন চলতে পারে না। আমরা সবাই মিলে এই নতুন বছরের পথচলা শুরু করবো এবং বিশ্বে শান্তি এবং সমৃদ্ধি আনতে একে অপরের পাশে দাঁড়াবো।
এভাবেই বিদায় হবে ২০২৪, তুমি আর থাকব না, তোমার সঙ্গে আমরা চলব না। কী দিয়েছি বা দেয়নি, সে বিষয়ে আর ভাবনা নেই। রাত কখন শেষ হয়ে সকাল হবে, সে চিন্তা থাকে না। কখন, কে, কোথায় এবং কীভাবে ঘুমিয়ে আছে- তার আর কিছু জানার প্রয়োজন নেই।
শুভ ও মুক্ত চিন্তায়, নতুন বছরের প্রত্যাশায়। একটি শান্তিপূর্ণ এবং স্বস্তিপূর্ণ সময়, একটি দুর্নীতি ও অনীতিমুক্ত সমাজ, একটি সুস্থ ও অভাবমুক্ত জীবনের নতুন পথচলা হোক আমাদের সকলের প্রত্যাশা। সেই সাথে স্বাগতম নতুন ইংরেজি নববর্ষ ২০২৫। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা, অভিনন্দন এবং ভালোবাসা জানাচ্ছি।
Posted ১০:৫৯ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
ajkersangbad24.com | Fayzul Ahmed