অনলাইন ডেস্ক | শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 75 বার পঠিত
দেশের এক ইঞ্চি মাটির ওপর কারও দখলবাজি চলবে না, চলতে দেওয়া হবে না হুঁশিয়ার করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা সেই স্বপ্নের দেশ গড়বো। যেই দেশে মসজিদ, মন্দির, গির্জা কোথাও পাহারা দেওয়া লাগবে না। বরং ঘরেবাইরে এবং সামাজিক ও পেশাগত কাজে একজন নাগরিক সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ভোগ করবেন। এটা আমরাই নিশ্চিত করবো।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে ঐতিহাসিক সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে সিলেট জেলার কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, জনগণের ভালোবাসা পেলে এমন একটি দেশ গড়বো যেখানে কেউ চাঁদাবাজি করবে না, চাঁদাবাজি বরদাশত করবে না। কোনো অফিসে বসে কেউ ঘুষ খাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করবেন না আর এটা করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার দেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা বৈষম্যহীন একটা বাংলাদেশ গড়তে চাই। একাজটা জামায়াতে ইসলাম কর্মী-রুকনরা একা করতে পারবে না। এজন্য দরকার জনগণের ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা। এমন একটি বাংলাদেশ গড়ার জন্য আসমান থেকে ফেরেস্তা পাঠিয়ে কিছু করে দিবেন না। এই জমিনের মানুষই করবে। তারা ভালপথে এগুলে, আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে এগুলে, আল্লাহতায়ালা তার ফেরেস্তা পাঠিয়ে সাহায্য করবেন। কিন্তু মানুষকে আগে এপথে এগুতে হবে। জামায়াতের নেতাকর্মীদের বলি- আসুন বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার দিকে এগিয়ে চলি। বৈষম্যহীন চরিত্র আগে নিজের মধ্যে সেটা তৈরি করি। ভুল এবং ঘাটতি পূরণ করে দেশকে বৈষম্যহীন সমাজের দিকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
পুরো জাতিকে অন্তরে ধারণ করার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, এখানে ধর্মের ভিত্তিতে জাতিকে ভাগ টুকরা টুকরা করতে দেবো না, আমরাও করবো না। আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি চাই। দল-ধর্ম নির্বিশেষে। সেই শান্তির বাংলাদেশ, অগ্রগাতি উন্নয়নের বাংলাদেশ ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার বাংলাদেশ, রাজনীতি মুক্ত বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ গড়ার জন্য আপনাদের মাধ্যমে আহ্বান করতে চাই। এজন্য কোরআন হাদিস পড়ে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে। এবং ঐ জ্ঞানের আলোকে নিজেদের চরিত্র তৈরি করতে হবে। মানুষের কাছে ইসলামের কল্যনময় আহ্বান পৌছে দিতে হবে। আমাদের অঙ্গিকার হউক- আগামির বাংলাদেশ গড়তে আগে যে ত্যাগ শিকার করেছি তার চেয়ে বেশি ত্যাগ শিকার করতে প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি কর্মীদের প্রতি প্রশ্ন ছোড়ে দেন। আপনারা কি প্রস্তুত ? মাঠ থেকে জবাব আসে জ্বি।
আমরা দলমত জাতি ধর্ম পেশা নির্বিশেষে সবার কাছে প্রাণ খুলে পৌঁছে যাবো। এাজন্য আলোম ওলামাদের বিশেষ দোয়া এবং সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন। এখানেও আমরা কোন ভাগ ও বিভক্তি করবো না। ওলামায়েকেরাম আমাদের মাথার তাজ। তাদের দোয়া আমাদের লাগবে। তাদের সহযোগিতাও আমাদের লাগবে। তাদেরকে ইজ্জতের সাথে বুকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যাবো।
ধর্মের কারণে আর কোন মানুষ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গত ১৫ বছর পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় যে নামাজে গেছে; তাকে চরমভাবে অপদস্ত করা হতো। একইসাথে তার অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হতো। এই অপকর্ম আর বাংলাদেশে হতে দেওয়া হবে না।
সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান। অনুষ্ঠান যৌথভাবে পরিচালনা করেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, সহকারী সেক্রেটারি মাশুক আহমদ ও নজরুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দীন, সিলেট মহানগরী আমির ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা তোফায়েল আহমদ, মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আমির ইঞ্জিনিয়ার সায়েদ আলী, হবিগঞ্জ জেলা সেক্রেটারি মহসিন আহমদ, সিলেট জেলা নায়েবে আমির অধ্যাপক আবদুল হান্নান ও হাফেজ আনোয়ার হোসেন খান, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা সৈয়দ ফয়জুল্লাহ বাহার ও লোকমান আহমদ, গোলাপগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির হাফেজ নাজমুল ইসলাম, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল হোসাইন, ছাত্রশিবির মহানগর সভাপতি শরিফ মাহমদু, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি তারেক মাহমুদ প্রমুখ। এর আগে সকালে সিলেট মহানগর জামায়াতের ওয়ার্ড দায়িত্বশীল সম্মেলনএবং ন্যাশনাল ডক্টরর্স ফোরাম এনডিএফের বিভাগীয় চিকিৎসক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ডা. শফিকুর রহমান ।
ঘন কুয়াশা আর শীতের কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে হাজার হাজার কর্মী সমর্থক সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হন। মানুুষের ঢলে সম্মেলনস্থল উপচে আশপাশের রাস্তাঘাট মানুষে মানুষে সয়লাব হয়ে যায়। সকাল এগারটার দিকে কুয়াশা কেটে ঝিকিমিকি রোদ দেখা দেয় সিলেট নগারে।
ডাক্তার শফিকুর রহমান উল্লেখ করেন, ২০০৫ সালের ২৮ অক্টোবর দেশের মানুষ পথ হারিয়েছিল এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পথ ফিরে পেয়েছে। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর এদেশের মানুষ দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়েছে। এখন আর রাত জেগে রাত পোহাবার অপেক্ষা করতে হয় না। আমিওে জামায়াত বলেন, দলের ১১ জন শীর্ষ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে একজন বেচে আছেন। তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের নাম উল্লেখ করে বলেন, একই জেলখানায় থাকলেও এই জালিম গোষ্ঠি তার সাথে আমাকে এক মুহুত্র্ওে জন্যও দেখা করতে দেয়নি। তার ওপর অনেক জুলুম অত্যাচার করা হয়েছে। ৫ আগস্টেও পর এই জুলুম কিছুটা কমে এসেছে। অচিরেই তিনি মুক্তি পেতে পারেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন জামায়াতের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। সকল ষড়যন্ত্রেও জাল ছিন্ন কওে জামায়াত এগিয়ে চলছে। সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুূল কাদেরের নাম উল্লেখ করে আমিরে জামায়াত বলেন, তিনি তার নেতাকর্মীদের উস্কানি দিয়ে প্রায় সময় বলতেন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে ৫ লাখ মানুষকে হত্যা করা হবে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর ৫ জনও হত্যাকাণ্ডের শিকার হননি। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ইসকন সদস্যরা হিন্দু হয়রানির অজুহাত তুলে দেশে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছিল। এডভোকেট সাইফুল ইসলামকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন করা হয়। কিন্তু একজন মুসলমানও তাদের পাতানো ফাঁদে পা দেয়নি। বাংলাদেশের হিন্দুরা বলেছেন, আমরা শান্তিতে আছি। স্বস্তিতে আছি। আমাদের শান্তিতে থাকতে দিন।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সকল দলের ও মতের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে বলেছেন সকল ষড়যন্ত্রেও বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার রয়েছেন। তিনি বলেন, পিলখানায় ৫৭ জন চৌকস সেনা অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে। শাপলা চত্বওে হাজার হাজার আলেম ওলামাকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের আলেম ওলামাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। তারা নিরীহজনগণ হত্যাকারী তাদের এদেশের মানুষের কাছে ভোট চাওয়ার অধিকার নাই। বাংলাদেশের মানুষের শান্তি যারা কেড়ে নিয়েছে; তারা কার কাছে ভোট চাইবে ?
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেন, বাংলার জমিনে ফ্যাসিবাদ আর স্বৈরাচার আর ফিরে আসবে না। আমাদের সুন্দর আচরণ দিয়ে প্রমাণ করতে হবে জামায়াতে ইসলামী সাধারণ মানুষের সঙ্গে রয়েছে। প্রতি ভাল কাজের সাথে জামায়াতে ইসলামী দেশবাসীর সাথে থাকবে ইনশা আল্লাহ। মুহাম্মদ সেলিম উদ্দীন বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ বিজয় অর্জন করলেও ৫৩ বছরেও স্বাধীনতার সুফল পায়নি। ২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর স্বাধীনতার সুফল পেতে শুরু করেছে দেশবাসী। তিনি বলেন, এ্ই ঐক্যেও বিরুদ্ধে যারা ফাটল ধরানোর চেষ্টা করবে তাদের পরিণতি হবে শেখ হাসিনার মতো।
Posted ১০:১২ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
ajkersangbad24.com | Fayzul Ahmed