অনলাইন ডেস্ক | শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট | 150 বার পঠিত
পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা। ১,৪২,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পৃথিবীর এই পঞ্চম বৃহত্তম মহাদেশে নেই কোনো দেশ। সবচেয়ে ঠান্ডা, শুষ্কতম স্থান এই অ্যান্টার্কটিকা। বরফে ঢাকা সাদা এই মহাদেশের অনেকাংশে এখনো পা পড়েনি মানুষের। অনেক কিছুই অজানা রয়ে গেছে এই মহাদেশের। এই মহাদেশকে আপন বৈশিষ্ট্যে অক্ষুণ রাখতে ১৯৫৯ সালের ১ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হয়েছিল অ্যান্টার্কটিক চুক্তি। এই বিশেষ দিনে রহস্যময় এই মহাদেশ নিয়ে লিখেছেন টি এইচ মাহির
অ্যান্টার্কটিক চুক্তি
বরফের মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকাকে সুরক্ষিত রাখতে ১৯৫৯ সালে চালু হয় অ্যান্টার্কটিক চুক্তি। অ্যান্টার্কটিকা পৃথিবীর একমাত্র মহাদেশ, যেখানে স্থানীয় মানব জনসংখ্যা নেই। আলাদা করে কোনো দেশ এর মালিক নয়। তাই সামরিক কর্মকা- এবং খনিজ সম্পদ খনন নিষিদ্ধ। বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে সহায়তা এবং মহাদেশটির ইকোজোন সুরক্ষিত করতে ১৯৫৯ সালের ১ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হয় অ্যান্টার্কটিক চুক্তি। এই চুক্তিতে ইন্টারন্যাশনাল জিওফিজিক্যাল ইয়ার (আইজিওয়াই) অ্যান্টার্কটিকায় সক্রিয় ১২টি দেশ আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, চিলি, ফ্রান্স, জাপান, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা, সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র স্বাক্ষর করে। পরে ৫০টির অধিক দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। যা অ্যান্টার্কটিক চুক্তি বা Antarctic Treaty System (ATS) নামে পরিচিত।
জাভোডোভস্কি দ্বীপ
অ্যান্টার্কটিকার জাভোডোভস্কি দ্বীপে দেড় মিলিয়ন পেঙ্গুইনের আবাসস্থল, যা পৃথিবীর বৃহত্তম পেঙ্গুইন বসতি। জাভোডোভস্কি দ্বীপ একটি জনবসতিহীন আগ্নেয় দ্বীপ, যা অবস্থিত দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে। দ্বীপটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৮১৯ সালের ডিসেম্বরে ফ্যাবিয়ান গটলিব ভন বেলিংশউসেন আবিষ্কার করেছিলেন। অ্যান্টার্কটিকার জাভোডোভস্কি দ্বীপ পৃথিবীর বৃহত্তম পেঙ্গুইন কলোনি নামে পরিচিত। এখানে বসবাসকারী প্রাণীর মধ্যে চিনস্ট্র্যাপ পেঙ্গুইনের সংখ্যায় বেশি। তবে পেঙ্গুইন ছাড়াও অন্যান্য সামুদ্রিক পাখিও বাস করে এই দ্বীপে।
মেরু ভালুক নেই অ্যান্টার্কটিকায়
বরফে ঢাকা মেরু অঞ্চল হলেও অ্যান্টার্কটিকায় নেই মেরু ভালুক। অনেকের ধারণা, বরফের মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকায় বসবাস করে মেরু ভালুক। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। মেরু ভালুক অ্যান্টার্কটিকায় নয়, আর্কটিক অঞ্চল অথবা কানাডায় বসবাস করে। অ্যান্টার্কটিকায় মেরু ভালুক না থাকার প্রধান কারণ হলো জলবায়ু। মেরু ভালুক এই মহাদেশে সহজে মানিয়ে নিতে পারবে না।
মিঠা পানির রাজ্য
পৃথিবীর অধিকাংশ মিঠা পানি শুধু অ্যান্টার্কটিকায়। অ্যান্টার্কটিকায় পৃথিবীর ৭০ শতাংশ স্বাদু পানি রয়েছে। তবে অধিকাংশ পানি বরফ আকারে আছে। তাই অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলিয়ে পানও করা যাবে। পানযোগ্য পানির ক্রমাগত হ্রাসের এই দুরবস্থায় অনেকেই সমাধান হিসেবে অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলিয়ে পানের পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু সে চেষ্টা করা উচিত হবে না একদমই। কারণ অ্যান্টার্কটিকা এত বিশাল আর এখানে এত পরিমাণ বরফ আছে যে, অ্যান্টার্কটিকার বরফ যদি গলে যায় তাহলে পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠ ২০০ ফুট বৃদ্ধি পাবে। ফলে স্থলভাগ যেখানে আমরা বসবাস করি তার অনেক স্থানই পানির নিচে তলিয়ে যাবে।
অ্যান্টার্কটিকায় সরীসৃপ নেই
অ্যান্টার্কটিকাই একমাত্র মহাদেশ যেখানে সরীসৃপ নেই। সাপ, কেঁচো, টিকটিকি কোনো সরীসৃপই নেই অ্যান্টার্কটিকায়। মূলত সরীসৃপরা তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করার জন্য বাহ্যিক তাপ উৎসের ওপর নির্ভর করে। যা অ্যান্টার্কটিকার হিমায়িত জলবায়ুতে খুব কম সরবরাহ হয়। অন্যান্য ঠা-া আবহাওয়ায়, সাপ শীতকালে শীতনিদ্রায় চলে যায়। কিন্তু এখানে, মাটি সবসময় হিমায়িত এবং তারা টিকে থাকতে পারে না। তাই অ্যান্টার্কটিকায় সরীসৃপের দেখা মেলে না।
আক্কেল দাঁত ও অ্যাপেনডিক্স বাদ
অ্যান্টার্কটিকায় কোনো কারণে কাজ করতে কিংবা বসবাস করতে গেলে মানবদেহের অ্যাপেনডিক্স বাদ দিতে হয়। কেননা এই মহাদেশে কোনো শল্যচিকিৎসা নেই। তা ছাড়া যে কজন ডাক্তার আছেন তারা সার্জন নন। তাই লোকেদের দীর্ঘমেয়াদি থাকতে হলে অ্যাপেনডিক্স আগে থেকে কেটে বাদ দিতে হয়। তা ছাড়া আক্কেল দাঁত থাকলেও আগে থেকে বাদ দিতে হবে অ্যান্টার্কটিকায় পা রাখার আগে। পরে যাতে সমস্যা সৃষ্টি করতে না পারে তাই আগে থেকে সতর্কতাস্বরূপ আক্কেল দাঁত ও অ্যাপেনডিক্স বাদ দিতে হয়।
অ্যান্টার্কটিকার নিজস্ব ডোমেইন
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের যেমন নিজস্ব ডোমেইন আছে তেমনি অ্যান্টার্কটিকার নিজস্ব ডোমেইন আছে। যদিও অ্যান্টার্কটিকায় কোনো দেশ নেই। কোনো স্থায়ী মানব বসতি নেই। বিভিন্ন দেশের যেমন বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ড তেমনি অ্যান্টার্কটিকার ডোমেইন হলো অ্যান্টার্কটিকায় বসবাসকারী গবেষক, বিভিন্ন সংস্থার জন্য এই ডোমেইন।
Posted ৪:৫০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩
ajkersangbad24.com | Fayzul Ahmed